শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
5/5 - (1 vote)
কবিতা ১

বন্ধু ও বান্ধবী গণ,গোলাপী রঙ কতটা বিপজ্জনক ঢেউ খেলানো সহজেই পতন হতে পারে আপনার যাবতীয় মনঃসংযোগ ও নৈতিক কঠোরতার সেটি প্রথম বোঝা গিয়েছিল পিরপাঞ্জালের পটভূমিতে দেবদারুর পাশে ওয়াহিদা নামের এক বিস্ময় তরুণীর লীলায়িত ছন্দে,

কাশ্মীরের বালিকার গন্ডদেশ ও সেপ্টম্বরী আপেলের নির্যাস মাখা সেই গোলাপী রঙ ,শাড়ি ও গাত্রবর্ণ ,ফিনফিনে মসৃন পালকের মতো যার উড়ন্ত উদ্ভাস,অতীব ভালনারেবল সেই অপাপবিদ্ধ সৌন্দর্য্য প্যার করনে বালে প্যার হি করেনগে ও জ্বলনে বালে জ্বল জ্বল হি মরেঙ্গে সেই বেদ বাক্য যখন উচ্চারণ করেন তখন সম্ভবত আমি আপনি আপনারা পাঁচ সিকে দিয়ে বিশ্বজয় করতে পারতেন,

তখন নায়ককে মুখে সফট আলো নিয়ে মারামারি না করলেও চলত এবং আংরী ইয়ং ম্যানের যুগ শুরু হয় নি।

চিত্রদীপ দাশের ছবি

বন্ধু ও বান্ধবী গণ এহেন বিস্ময় তরুণী তার রহস্যময় সৌন্দর্যের চোখে মুখে নিবিড় বেদনা ও মদ্যপান জনিত ক্লান্তির এক একটি পেগ নিয়ে রাঙ্গিলার প্রতি অনুযোগ ও বেদনা জানান,ওয়াহিদার প্রতি অবসেসড দর্শক গণ বনজ্যোৎস্নায় সাজনবা বৈরি ভইল কেন তার কারণ খুঁজতে বসেন।
বিশ্বায়ন,মাল্টিপ্লেক্স সোভিয়েতের পতন খোলা বাজার টিভি মোবাইলে সিনেমা আরো বহু দশক পরের ঘটনা।পিঙ্ক বা গুলাব গ্যাং ভিমপলাশীর বিরহা নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের কাহিনী,
বন্ধু ও বান্ধবীগণ,গোলাপী বালার মতো করবট শব্দটিও অভিসন্ধিমূলক ,চোরাপথের ঈশারাদায়ক ও বিপজ্জনক।
করবটে বদলতে রাহে সারি রাতে হাম,আপ কি কসম।
জটিল এই পার্শ্ব পরিবর্তন প্রেম বৈরাগ্য আকুতি না আশ্লেষ
সেই নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই অনেকে জেনে যায় দুপুরে ঘুম দিলে রাতে এপাশ ওপাশ অবধারিত।ইনসমনিয়া করবটে ও
গোলাপী রঙ এখনো কিছু কিছু যাপনে বিপদ আহবান করে

তবুও কোনো মানব কিংবা মানবী এই রঙ রূপ ও বনজোস্নার গন্ধে আকুল ও আপ্লুত বোধ করে, ও পাঁচ ছয় বা সাতের দশকের জীবন কাটায়।মসৃন গোলাপ রং ও বর্ণ এইসব বিপদকে কাছে ডাকে।ইহাই লীলা ও মাধুর্য্য বন্ধু ও প্রিয় বান্ধবীগণ।

ছবি: চিত্রদীপ দাশ

কবিতা ২

চিত্রদীপ দাশের ছবি

এসো গোল হয়ে বসি,
আগুনটাকে একটু উসকে দাও,
স্মৃতিকাঠ দিয়ে——
বিপরীতে মুখগুলি কাঁপা কাঁপা,
কেউকি কাঁদে? সমিধ হয়ে আহুতি দিতে চায়?
ঈশ্বরের বাগানে কিন্তু ঠিক সময়ে গেট বন্ধ হয়ে যায়।
এর পর কথা বেশি হলে বের করে দেবে!

ছবি: চিত্রদীপ দাশ

কবিতা ৩

চিত্রদীপ দাশের ছবি

এই অবেলায় কোথায় আমি খুঁজবো তোমায় আসক্তিহীন ভালোবাসা,
সঙ্গিবিহীন মোহ নিয়ে অনেকটা সে পথে চলা,
কোথায় তুমি—–কোথায় তুমি?
চক্ষু হৃদয় বুক ফেটে যায়,
প্রতীক্ষারই প্রহর গুনে, নিরাসক্ত দেহ কুসুম,

ক্লেদ কীটেরই গন্ধে মাতাল উদাস হয়ে,
ভুল করে যেই হাত ছুঁয়েছি——

করতলের স্পর্শে দেখি
উথাল পাতাল নদী জোয়ার, সঙ্গহীনা দিনগুলি সব উজান ঠেলে বাইতে থাকে।
মুদ্রা ভঙ্গি ঠিক বরাভয়,
পালিয়ে গিয়েও কোথায় যাবে?
কোথায় তুমি নিঃসঙ্গ সেই মুগ্ধবোধের
প্রথম পাঠের ভালোবাসা?

পালিয়ে গিয়েও কোথায় যাবে?
আদিগন্ত খোলা মাঠে কিংবা ভয়াল জনপদে
মানুষ দেখে ক্লান্ত হয়েও
খোঁজার পালা চালিয়ে যেতে হবেই হবে।

কোথায় তুমি কোথায় তুমি ?
আসক্তিহীন অসময়ের আকুতিময় উজাড় করা
সঙ্গিবিহীন ভালোবাসা!

ছবি: চিত্রদীপ দাশ

কবিতা ৪

চিত্রদীপ দাশের ছবি

পিঠে পিঠ দিয়ে বসাই ভালো,
মুখ দেখতে হবে না, কিছুটা আরামদায়কও।
অনেক তো হলো! কথাও ফুরিয়ে গেছে বহু দিন–
মান অভিমান, শিমুলের তুলো হয়ে ভাসে;
যে কোনো একজন সূর্যাস্ত দেখবো,
আরেকজনের পালা পরে।

ছবি: চিত্রদীপ দাশ

কবিতা ৫

চিত্রদীপ দাশের ছবি

সবুজ ঘন পাহাড় অনেক পাতা বাহার দেখো
নীল নির্মল আকাশ, ঈশ্বরেরই বাগান , ভুলে

আকাশটাকে ভাবো ওতো সাক্ষী ঘনঘটার
আজো, পাইনফারের পাতা কেঁপে শিরশিরিয়ে

ডাকে আয় ঘন গম্ভীর ধ্বনি, গভীর স্বরে বাজে
ধর্মচক্র ঘোরে, ওঁ মনিপদমে হুম, গুম্ফা ধ্বনিজাগে,

অস্ত্র জাগে সীমায়, প্রহরা চৌকি ভাবায়।

ছবি: চিত্রদীপ দাশ