বিশ্বজিৎ আঁকুড়ে

বিশ্বজিৎ আঁকুড়ে

পশ্চিম বর্ধমান জেলার অযোধ্যা-বনকাটি গ্রামে আটের দশকের শেষের দিকে জন্ম। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। পেশায় শিক্ষকতা।স্কুল জীবন থেকেই নাটক-গান, চিত্রকলা ও লেখা-লেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন । 'দেশ' পত্রিকাসহ বাংলার প্রথম শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। । অন্তর্মুখী কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ঋতুহীন কবিতা গুচ্ছ'। সম্পাদনা করনে 'রাঢ় বনতলি' সাহিত্য পত্রিকা।

বিশ্বজিৎ আঁকুড়ের কবিতাগুচ্ছ

অঞ্জন চক্রবর্তী ছবি
ক্লিওপেট্রার পারফিউম সিরিজ
কবিতা ১

অঞ্জন চক্রবর্তী ছবি

নিজের ভেতর মানুষ খুঁজতে খুঁজতে আয়নার সামনে দাঁড়াই। কথা বলি । সেও কেন কেঁদে ভাসিয়েছে নদী ! ছুটে যাই। পথে পথে পৌষ পালনের দিন, সে হিমের সঙ্গমে মেতে আছে রাস্তার কুকুর। ছুটে যাই আরও ! গাঢ় হয় জঙ্গল। অকাল ক্ষণে কোকিলের ডাক শুনি ! থেমে থেমে ডাক ভাসে ধূসর ঘুঘুর।বাঁশিতে কেন আচানক দেবগান্ধারী ! ছড়িয়ে যাচ্ছে ঢেঁকুর ! আবহ গাঢ় হয়। ঘন হয় মোহঘোর। কেন এত মনোপজ ! কেন এত বিভাব মেখে নাও তুমি! নিমগ্ন নিসর্গের কাছে কিছু ক্ষত জমে আছে। এই যে এতো ঋণ ভারে জড়িয়ে যাচ্ছি ক্রমশ ! সেও কী ঋণী করে, ফেলে গেছে আমায়! আমিও যে হারিয়ে ফেলি চেনা চেনা বিহানের বিরল রোশনাই ! দু-ফালি দৃশ্যের লোভে ভুলে যাই ঘর! হেঁটে যাই মিথ্যের অলিগলি! নিশানায় তাক নেই বলে, ঠাওর করতে পারিনি ঘুঙুরের আরোহ! অবরোহের শোক ছায়া।এঁকেবেঁকে যে পথ ফুরিয়ে গেল আজ। তালগোল পাকিয়ে গেল দিনের ভেতরে গহন সব রাত। তুমিও অনয়াসে অনিবার্য ভোরের গদ্য লেখো। খুঁজে নাও নহলী নগর ! সাজানো বাগান বাতিঘর !
আমার দুর্বল ক্ষয়ে চুনসুরকি সেঁটে দিই। নিথর স্থাপত্য হই। বেঁচে থাকি,জেগে থাকার মতই ……

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

কবিতা ২

অঞ্জন চক্রবর্তী ছবি

নিদ্রা মত এসো ! অবচেতন ঘিরে রাখো সফল মুহূর্ত ! বেদম মগ্নতায় জাপটে ধরো অনুক্ষণ। জপাটে ধরো ঘনিয়ে আসা আমারই শোকপ্রস্তাব। লতায়-পাতায় গজিয়ে ওঠো তীব্র খামোশি। অষ্টমীর খ্যানের হুবহু খামোশি জড়িয়ে আসে। মরা নদী স্রোতচিহ্নে দাগে দেখো গতি ভাঙার শব্দ। কীভাবে বয়ে আসে নিজস্ব নীরবতা! সংকেত লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি গতজন্ম আবার । নিজেকে তর্জমা করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি হলুদ আগুন। তীব্রতা শুকিয়ে যায়। মহার্ঘ হয়ে ওঠে নিশুতি ধন্দ। রং ছাড়িয়ে ধূসর হচ্ছি এখন ।

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

কবিতা ৩

অঞ্জন চক্রবর্তী ছবি

গতিপথ বদলে ফেলে হাওয়া।ঘন শীতের পা-য় টাকু লেগেছে রাত। নক্সীকাথায় মোড়া আমার কুহক আকাশ বন-জঞ্জল নদী সমুদ্র চিতা। ভুলে যাবো। ওই কি পথ! সে পথ ফুরিয়ে গেলেই, আমিও বাঁক নিতে পারি-একথা বলিনি আমি। প্যান্ডোরার মুখবন্ধ কৌটো সব জানে। শুধু অপেক্ষায় গলে যায় সময়। সেই সন্ন্যাসী দুপুর, এ শরীর ছোঁবে ধেয়ে আসা লু। খসে পড়া মনের মতো আমিও উড়তে উড়তে মাঘের ব্যালকনিতে আঁটকে যাব। নিশ্চিত চিনে দেবে কৌতূহলশূন্য তদ্ভাব ! তবু যে আড়ালে গুছিয়ে নেবে বলিরেখা, কপালে নেমে আসছে চুল, দখিনের মৃদু উদাস সরিয়ে নিতে নিতে বিয়োগই লিখে যাব আমি।

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

আরো পড়ুনবিশ্বজিৎ আঁকুড়ের কবিতাগুচ্ছ