ইরাজ আহমেদ

ইরাজ আহমেদ

জন্ম মার্চ ২৫, ১৯৬৪। লেখালেখির শুরু আশির দশকের শুরুতে। লেখাপড়া শেষ করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রায় তিরিশ বছর । এখন লেখালেখির সঙ্গেই জড়িত। প্রকাশিত গ্রন্থ : ফেলে আসা রুমাল (কাব্যগ্রন্থ), এইসব অন্ধকার (উপন্যাস), পুড়তে থাকো বিজ্ঞাপনের আগুনে (কাব্যগ্রন্থ), যেখান থেকে আকাশ দেখা যায় না। উপন্যাস). কয়েকটি মৃত জোনাকী (গল্পগ্রন্থ), বৃত্তের ভেতরে একা। (উপন্যাস), শীতে ভবঘুরে (কাব্যগ্রন্থ), অভ্যুত্থান (উপন্যাস), চৈত্রের দিন (উপন্যাস), মহাকালের ঘােড়া (উপন্যাস), চে গুয়েভেরার আফ্রিকার ডায়েরি (অনুবাদ)।

ইরাজ আহমেদের কবিতাগুচ্ছ

অঞ্জন চক্রবর্তীর ছবি
আচ্ছন্নতা

অঞ্জন চক্রবর্তীর ছবি

যদি বলো এখানেই আগুনের শেষ
যদি লিখে রাখতে বলো আমাকে পুড়ে যাওয়ার সব অভিজ্ঞতা দক্ষ টাইপরাইটার চালিয়ে,
লিখে রাখবো সব কিছু তোমার ফিরে আসবার আগে সব কিছু।
যদি বলো, এটুকু দুঃখময়; না ঘুমিয়ে মনের মধ্যে
জেগে থাকা সহস্র বছর
তবে তাই হোক
তবে তাই হোক।
যদি বলো, বিকালে কী নির্জন হয়ে থাকে সেফটিপিন
আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানায়, দুপুরে যে-সব মাছ ভেসে ওঠে নির্জন পুকুরে
তাদের কোনো দুঃখ নেই,
মেনে নেবো।
যদি বলো, ভাত খাও,
যদি বলো অতিথি সৎকার
যদি জলের গেলাসে বিষ হও
যদি আরও অনেক বছর বলো আহত হবার ইতিহাস লিখে কাটাতে,
মেনে নেবো।

শুধু বলো তুমি, এখানেই আগুনের শেষ
এখানেই শেষ সব অন্ধকার।

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

অভাবী মানুষ

হতেও তো পারে আমি খুব অভাবী মানুষ
হাত খালি
সারা গায়ে ধূলে
ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ছি তোমাদের সন্ধ্যাবেলার শরীরে
হতেও তো পারে
পালানোর পথ খুঁজতে খুঁজতে দেরি হয়ে গেছে
আমাকে আটকে রেখেছে অবেলার অসুখী তরকারি আর বাসি ভাত?
হতেও তো পারে কেউ ভালোবাসেনি আমাকে
একদিন রেলগাড়ি থেকে খামেখাই উড়ে এসে
কান্না পড়েছে চোখে।

নীল রুমাল

অঞ্জন চক্রবর্তীর ছবি

পথের ধূলো এসে কপালে লাগে,
চুলে, শার্টের পকেটে জমে—
কোনোদিন গাড়ির বদল
কোনো দিন ইস্টিশন।

কাঙাল এভাবে যায়…

মনুষ্য জন্মের যা কিছু টলমল করতে করতে যায় তার পেছন পেছন।
ঝড়ে, পাতার অসংখ্য পতনে
কেঁপে উঠে পথের ধূলোর দিকে যায়।
উনিশশো চৌষট্টি সালের মার্চ মাসে জীবনে প্রথম
চোখ খুলে দেখি বাস চলে যাচ্ছে,
কোনো রেস্তোরাঁর দরজায় আলো মাখা এক লোক
শুভেচ্ছা জানাচ্ছে তার নীল রুমাল নেড়ে।

কাঙাল এভাবে যায়…

অরণ্যে যায়
নৌকার মতো নদীতে একা যায়
তীরে শেষ আয়োজনে যায়।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে গল্প লিখে চলেছি এখন
চোখ খুলে আজও দেখি শহরে কেউ নেই
একলা বাতাসে উড়ছে তোমাদের অসংখ্য নীল রুমাল।

কাঙাল এভাবেই যায়
উল্কি কাটা নিজস্ব হাতের দিকে যায়
অপ্রয়োজনের দিকে যায়।

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

রুগ্ন সাইকেল

রুগ্ন সাইকেল যেতে চায়। পথ খুঁজে পেতে চায়।
সে কি মাতৃহীন?
সে কি পিতৃহীন?
একা যায়, যায় শীতকাল। গমের কুড়া ওড়ে বাড়ির উঠানে।
দক্ষিণের বারান্দায় আজও রোদ পড়ে আছে। একা সাইকেল যায় রঙহীন, গোত্রহীন আমি যেরকম যাই। পৃথিবীর সব কথা শুনতে পেয়েছে কি আকাশের নক্ষত্ররা?
ছাই হয়ে গেলে শেষে কিছুই থাক না সুষমা বলতে যা বোঝো তোমরা।
একা হয়ে থাকা বোঝো না
নিঃস্ব হয়ে থাকা বোঝো না।
কিচ্ছু বোঝো না তোমরা।
একা থাকা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের ওষুধের আলমারি জানে আত্মহত্যা করার আগে কত পরিমাণ অ্যালকোহল প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। মানুষ ঘুম চায়, শান্তি চায়। যেন সে নদীর মতো কোনোদিন দেখেনি উৎসব জলের। নৌকার বেদনা। যেন তার কষ্ট হয় জেনে নিতে কবেকার এক মায়ের রাজকুমার ভেসেছিল করুণ ভেলায়।
রুগ্ন সাইকেল সমস্ত শরীরে মেঘ মেখে এসে বলে, চলো।
যায় পথ
যায় চাঁদ যেন সে চেনেনি কোনোদিন পথরেখা।

শীতে বাবা চলে যায়নি। মা গেলো। ভাই গেলো দমবন্ধ গরমে ভুগতে ভুগতে।
আমি ক্যালন্ডার খুঁজে দেখি আর একটাও তারিখ নেই
যা দিয়ে মৃত্যুকে সাজাই।

রুগ্ন সাইকেল, যাবার পথ চেনো তুমি?

আরো পড়ুনইরাজ আহমেদের কবিতাগুচ্ছ