শামীম রেজা

শামীম রেজা

জন্ম ৮ মার্চ ১৯৭১। বরিশালের ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়ার জয়খালি গ্রামে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নিম্নবর্গের মানুষ : বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কবিতা-তুলনামূলক আলোচনা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিসেম্বর ২০১১ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ—'পাথরচিত্রে নদীকথা', 'নালন্দা, দূর বিশ্বের মেয়ে', 'যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে', 'দেশহীন মানুষের দেশ' ইত্যাদি। 'যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে' কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০৭ সালে পেয়েছেন 'কৃত্তিবাস' পুরস্কার। কবিতা ছাড়াও কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধ রচনায় সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

শামীম রেজার কবিতাগুচ্ছ

চিত্রদীপ দাশের ছবি
বুক পকেটে নদী ও নবীন কবিরা

চিত্রদীপ দাশের ছবি

বুকপকেটে করে যে নবীন কবিরা
দূর গ্রাম থেকে যার যার নদী নিয়ে এসেছিল
এই নগরে, তারাই দিব্যি বেঁচে আছে আজো

কফিন ভর্তি প্রাসাদের থেকে দূরে বসে
দেখি আর শুনি সেইসব মৃত সমুদ্রের কথা
মনে পড়ে যায় তাচ্ছিল্যে ভরা নায়িকার হাসি
যেন সেই সব দিনে ছিলে চলমান রূপকথা
যেমন মনে পড়ে তারাভরা মৌন আকাশের মতো তোমাকে
চেয়ে চেয়ে না পেয়ে ফিরে আসা
মনে পড়ে সেই বন্ধুর কথা
নৈ:শব্দ দিয়ে যে হৃদয় পরিভ্রমণ করতে চেয়েছিল
সেও বাঁইচা নাই, যদিও জীবিত তার দেহ।

চুম্বনের ভাস্কর্যে নির্মিত সেই প্রেয়সীর নাম
মুইছা গেছে কবে, যার জন্য প্রিয় তার করেছে আত্মহনন
আশ্চর্য স্মরণ উৎসবে!

বিবর্ণ মুহূর্তে বিস্মৃত এই সময়ে
ভীষণ যুদ্ধের এই দিনে
দিন-রাত্তির পতনে,সময়ের পচনের পর
কিভাবে তবু সবুজ- নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে
বুক থেকে নদী বের করে সেই সব কবিরা
আজও সাঁতরায় আর
নতুন করে বেঁচে ওঠে
স্বপ্নগুল্মের ভেতরে বাহিরে

বিষণ্ণপুর

ওগো ভুল পথ, ভুল জোছনায়
চলে গেছো দূরে;আহত সকাল আজ
ভাঙা বাড়ির দরজা নেই
কে তুমি কুয়াশা হাতে
রোদ্দুর সরিয়ে দাঁড়িয়েছ সাউদপুরে?
ভেতরে আমার কান্নার শ্রাবণ
এই শরীর তোমার হতে পারে
একে তো চিনি না ও যে অচেনা মন ।

কে ডাকে ভেতরে আমায় ?
যোগসিদ্ধ নবী ছিল অন্তঃপুরে
আকাশ কাঁদছে আজ
ভার্চুয়াল জামায়।

ওগো ভুল পথ ,ভুল জোছনায়
চলে গেছো দূরে,উদ্বিগ্ন সময়
এই কলঙ্ক তুলে রাখি
কুয়াশা সরিয়ে আমারি
বিষণ্ণপুরে।

এই ভাবে যেতে নাই

চিত্রদীপ দাশের ছবি

এইভাবে যেতে নাই
এভাবে এসেছো কেন বলো?
চুল ভেজা শরীর দেখেছি সেই কবে
পূর্বজন্মের আত্মপরিচয়ের উৎসবে ।

সে কি হতে পারে ? সে হতে পারে না
অনন্ত গভীর চোখ পিছে ফেলে
অচেনা কার হাত ধইরা গেছো চলে

… হতেই তো পারে হয়েছে তো বেশ;
কত কত রাত বাহুবন্ধনে আনন্দ বিষাদ
একঘরে থেকে হয়েছি নিরুদ্দেশ।

নিজেকে জিগাই আসলে
এখনো কি বাসি ভালো
হয়তো না হয়তো সে মনে রাখে নাই
আমার সেই খুঁজে দেওয়া বিপন্ন আলো ।

এভাবে এসেছো কেন বলো ?
স্বৈরিতা ও বিষাক্ত প্রেমের ছোবলে ছোবলে
তুমি নীল হতে হতে প্রাসাদ থেকে
পালিয়েছো আজ

আমি কবি মাত্র সিংহাসনের
বিষাদের আলো থেকে দূরে

সুন্দরের আলো ছাড়া দেওয়ার নেই কিছু
যে আলো আগুনের মত সত্য
নিষিদ্ধ চুমুর মত নিরাময়

নিতে পারো নাও তবে
প্রাসাদের বিরোধিতা করে
ভালোবেসে যেতে পারি
দুইজনে মৃত্যুর অন্তপুরে ।

হারানো হৃদয়

লস্ট এন্ড ফাউন্ড কাউন্টারে আমি তুমি সে
তোমার এবার বোধ হয় কিছু হারিয়েছে ।
চোখের কোণে যে জল জমে ছিল অনুরাগে
প্রেমহীন হৃদয় কীভাবে দেখবে তাকে ।
দেবদারু মতো প্রার্থনারত দূরে ওই দেখো কে
আমার হারানো হৃদয় খুঁজছে অচেনা এক মেয়ে।

ছবি : চিত্রদীপ দাশ

আরো পড়ুনশামীম রেজার কবিতাগুচ্ছ