সুজিত দাস

সুজিত দাস

জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৬৮। মালদা শহরে। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। পেশায় সরকারি আধিকারিক। এখন শিলিগুড়িতে কর্মরত। কবিতা প্রকাশিত হয়েছে 'দেশ', 'কৃত্তিবাস' এবং অন্যান্য বহু পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা সাত। লিখে কোনও সরকারি পুরস্কার জোটেনি। পেয়েছেন ভাষানগর মল্লিকা সেনগুপ্ত সম্মান, কৃষ্ণমৃত্তিকা সম্মান। নেশা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি, রান্না করা এবং আড্ডা দেওয়া।

রাতকাহন

অঞ্জন চক্রবর্তীর ছবি

মধ্যযামে রাজপথ তামাদি হয়ে যায়। শব্দের তীক্ষ্ণতা বাড়ে, বাসস্টান্ডে কুয়াশার সর পড়ে। রাত্রি গভীর হলে বাতাসে ভেসে আসে পড়া মুখস্ত করার একঘেয়ে আওয়াজ। কলকাতার মরা বন্দরে একটি শিপইয়ার্ড আছে। সেইখানে, কোথায় কী হয়, কেউ জানে না, শুধু ওভারকোট পরিহিত দীপকের হাতে ছয়ঘড়া রিভলবার চলে আসে এই মাঝরাতেই। গুড়ুম করে একটা আওয়াজ। লুটিয়ে পড়ে ড্রাগন, কালো নেকড়ে, মিসট্রিম্যান আর বাজপাখি। দূরের ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা বাজে। রতনলাল সব কিছুর দিকে নজর রাখে।

অঞ্জন চক্রবর্তীর ছবিমধ্যযামে রাজপথ তামাদি হয়ে যায়। আকাশবাণীতে ফৌজি ভাইয়োকে লিয়ে কারিওক্রম শেষ হয়, আমিন সাহানি ড্রিঙ্ক নিয়ে সোফায় বসেন। বড় আলোগুলি নেভে। নিভিয়া-র কৌটো বেরিয়ে আসে চেস্ট অফ ড্রয়ারের তৃতীয় বা চতুর্থ খোপ থেকে। ‘অভিশপ্ত নাইটি’র ভেতর পাশ ফেরে অন্যের বউ। চরাচর জুড়ে গোলপানা একটা সবুজ আলো জ্বলে। চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যায়। ‘অ্যাকটিভ’ সয়েডের টিপ। গাঢ় সবুজ।

মধ্যযামে আরও কত কী তামাদি হয়ে যায়। পুরনো দলিল ছেঁড়া হয়, নতুন কবুলিয়তনামা লেখা হয়। রাত বাড়লে তৃষ্ণা বাড়ে, পিপাসা মিটলে ঘুম আসে না। গড্ডলিকা প্রবাহ গুনতে গুনতে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে। ইনসমনিয়ার সবুজ নাইটবাল্ব নিভে আসে একসময়। জিরো ওয়াটের আলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মায়াবন্দর। চোখ বন্ধ করে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যায় রোগা মেয়েটি। টিউশনক্লান্ত যুবকের স্বপ্ন সিরিজে সঞ্জয়লীলা-র সেট। তুমুল গ্র্যাঞ্জার। স্বপ্নের মধুচন্দ্রিমায় রাজপ্রাসাদের ঝাড়বাতি জ্বলে। হাজার টাকার ঝাড়বাতি।

মধ্যরাতে শুধু নদীরাই জেগে ওঠে। নদী চির রজস্বলা। রাত বাড়লে নদীর শরীরে নীল শিরা দেখা যায়। ঝিঁঝিঁ পোকার সাউন্ডট্র্যাকে জলের অপার্থিব মাদারির খেল দেখতে হলে রাত জাগতেই হবে। দূরের মরাঘাট চা-বাগান থেকে তখন ভেসে আসবে হাঁড়িয়ার সুঘ্রাণ, মাদলের দ্রিমি দ্রিমি। পরবের আনন্দ। মোরগ লড়াইয়ের উল্লাস। মধ্যযামে শব্দের তীক্ষ্ণতা বাড়ে। সমস্ত শব্দমালা মৃদু স্রোতে মিশে কোথায় যে যায়!

মধ্যযামের থেকে পাকা নটী আর কেউ নেই। ঘুঙুর খুলে রাখা তবায়েফ যেন। মধ্যযাম এক অলৌকিক খেলাঘর, এক অ্যাকটিভ সবুজ বিন্দি।

রাত্রি এক না মেলা সিঁড়িভাঙা অঙ্ক। এক্সট্রা(লার্জ) উপপাদ্য।
এবং/অথবা ভুল সাইজের ব্রা। তুমুল অস্বস্তি।

ছবি: অঞ্জন চক্রবর্তী

আরো পড়ুনরাতকাহন

কথা দিইনি তো

অদ্রীশ সিংহের ছবি

অড়হর ক্ষেতে যাবো না বলে কোনও কথা দিইনি।
কখনও বলিনি, তোমার নয়নতারায় ফুঁ দেবো না। এসব কথা দিই না আমি।
যে-ঠাকুরঘরের দরজা এঁকেছ সাদায় কালোয়, বিনা স্নানে ঢুকে পড়তে পারি সেই গ্রাউন্ড জিরোয়।
ম্লান গরদ দেখে একথাও বলিনি যে তোমার হারানো অন্তরবাস খুঁজে দেবো মন্ত্রবলে।

অদ্রীশ সিংহের ছবিযে জ্যোৎস্না মেঝেতে পড়ে আছে,
তাকে এই অসময়ে খুজে দিতে বোলো না।
যে-কালো ত্রিভুজে অঙ্ক ভুল হয় তার কোনও অতিভুজ নেই। উপপাদ্য নেই।

সব এক্সট্রা সবসময় মেলে না।

প্রবঞ্চক পুরুষ জানে
রবিশস্যের রাতগুলিতে উষ্ণ হয়ে ওঠে কানের লতি।
গলনাঙ্কে পৌঁছে যেতে পারে জার্মান সিলভারের স্টাড।
প্রহেলিকাময় তসর অড়হর ক্ষেতের শেষ যবনিকা। জানো বোধহয়।

এদিকে ডলবি সাউন্ডে বেজে উঠল শেষ ঘন্টি। চরাচর অন্ধকার।
এখন আর কোনও প্রম্পটার নেই। মঞ্চসজ্জা নেই। উইংসের আড়ালে নেই কোনও তৃতীয় নয়ন।
এই দ্রাবিড় মালভূমিতে অবাঞ্ছিত প্রপস্‌ রেখো না মহীয়সী।
এ তোমার নদীমাতৃক, জোনাকিবহুল স্বরলিপি নয়। মালভূমির সবটাই পাথর। রক সলিড।

ছবি : অদ্রীশ সিংহ

আরো পড়ুনকথা দিইনি তো