অনাবিষ্কৃত
পথের পাশেই এক পথ পড়ে থাকে
তাকে কেউ আবিষ্কার করে না
মানুষের ভেতর আর এক মানুষ
তাকে কেউ চিনতে চায় না
প্রতিদিন অনাবিষ্কৃত এবং অচেনা
অন্ধকার সেখানে খেলা করে
পাথর ও কাঁটাগাছ জন্মায়
লাল টুকটুকে বন্য ফুল ফোটে
আমরা শীতে আপেল খেতে খেতে
একপাল পায়রার ওঠানামা দেখি
কেউ কেউ নারী হয়ে যায়
কেউ কেউ বেড়াল
কারোরই পোশাক নেই
কেউ কেউ নিতান্ত বাউল
আলো-আঁধারির একতারায় সুর কেটে কেটে যায়
ছবি: অরিন্দম বসু
রজনীর কাব্য
রজনী আসছে আর রজনী যাচ্ছে
কিছুই বলতে পারি না ওকে
আলো জ্বেলে ডাকতে পারি না
অন্ধকারে গন্ধ শুঁকি ওর
শুঁকতে শুঁকতে কাটাই নিশি
নিশিও আমার দুঃখ বোঝে না
কল্পনারা রোজ আসে
রোজ রাতে চৌকি বানাই
মরমি শব্দের বালিশে ঘুমিয়ে পড়ি
ঘুমের ভেতর খুলে রাখি দরজা-জানালা
স্বপ্নে আজ রজনী আসুক মনে মনে এই কামনা
রোজ রাতে দুঃসাহসে মনে মনে ডাকি ওকে
রজনী কি রাজনীতি আজ?
কোন্ পুরুষের ঘরে সে যায়?
আমি শুধু শব্দচারী শব্দের মাঠে নীরব দাঁড়াই
পতাকা নেই, মঞ্চ নেই শুধু এক প্রপঞ্চে জড়াই
শব্দের কাছে শব্দ পাঠাই
প্রজ্ঞার সঙ্গেই অলীক বিবাহ আর কিছু নয়
ছবি: শুক্তি ভট্টাচাৰ্য
মরীচিকা
এপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
ওপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
এপাশ ওপাশ জুড়ে শুধু মরীচিকা
ঘরকন্না করে
আমি তবে কার গর্ভে জন্মালাম?
একখণ্ড আকাশ বৃষ্টির অক্ষরে চিঠি লেখে
এক ঝলক বাতাস উড়িয়ে দেয় ধুলো
আমি খুঁজে পাই ফাগুন মাস
আমার নিগূঢ় ধান, আমার নিগূঢ় চাষ
মাঠ আর মহিমার সূর্য, নিগূঢ় পাখির গান
রোজ ফিরে আসে মরীচিকার মেয়ে…
ছবি: শুক্তি ভট্টাচাৰ্য
শিউলি খাতুন আজ এসেছিল
শিউলি খাতুন আজ এসেছিল বহুদিন পর
আজ বর্ষা নেই, কবেই মেঘ চলে গেছে
শিউলিও চলে গেল সন্ধ্যার আগে
এখন আমার নৌকা শুকনো খাতে পড়ে আছে
ভাসতে পারে না, হাসতে পারে না
দাঁড়ও কোথায় চলে গেছে
আমাদের সব সম্পর্কগুলি এখন এরকমই নদী
জল থাকে না, শিউলিরা এসে চলে যায়
আর অন্য সব লোকেরা বালি তুলে নেয়
আমাদের সব স্বপ্নের লাশ বালি হয়ে যায়
শিউলি প্রথম প্রথম এসে বলেছিল:
একদিন ঠিক ফুটব, ফুটবই তোমার ছাদে!
হলুদ বিকেল এসে চুমু খেয়েছিল সেদিন
বিশ্বাসের আলো ঝরেছিল চোখে মুখে
তারপর অনেক হলুদ বিকেল পার হলে
আমিও আশ্বাসের নৌকা বানালাম
দ্রুত গতি বয়ে গেল সম্পর্ক প্রবাহ
দাঁড় হল আমারই এক স্নিগ্ধ মনোবল
শিউলি খাতুন এখন অন্য পাড়ায় থাকে
যত মেঘ বৃষ্টি দেয় ওর পাড়াতেই
শরৎ উজ্জ্বল হয় এখন ওর ছাদে
সুগন্ধে ভরে থাকে স্বপ্নদের পাড়া
ছবি: শুক্তি ভট্টাচাৰ্য
আমার দুর্গা
এক পাশে আজও এসে দাঁড়াই
আজও তুমি সংহারিণী দুর্গতিনাশিনী
আজও তুমি বরাভয় আলো সঞ্চারিণী
তবু আমার আকাশখানি কেন তবে ছোট?
সারল্য হারাচ্ছে চারিপাশ
হইচই আছে তবু নেই আনন্দের ডাক
মানব-দিঘিতে রোজ কত পদ্ম ফোটে
তোমার পূজার পদ্ম তুলে জমা করি
অঞ্জলি দিতে আসি রোজ
তুমি তো হৃদয়ে আছ
তুমি এক সর্বব্যাপী মানবিক বোধ।
ছবি: অরিন্দম বসু
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর
অনুশোচনার সূচনা হলে
আমরা এখনও মরে যাইনি তো?
অক্ষম প্রশ্নটি জেগে ওঠে
সব দাবানল দূরে
আমরা শুধু তাপটুকু পাই
তবু হাওয়া কলঙ্কিত করে, উড়িয়ে আনে ছাই
এ জীবন মেঘদূতের হোক
আমরা সবাই ব্যর্থ কালিদাস
শব্দের চন্দ্রযানে চলে যেতে চাই নষ্ট মহাকাশ
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর, হে জীবন
বসতে চাইছ অনুকরণ-প্রিয়ার পাশে!
প্রজাপতি ধরতে চাইছ নতুন বার্ধক্যে এসে
ছবি: অরিন্দম বসু