বড় মহাকাল
অনুগ্রহ করে এই লেখাটির মূল্যায়ন করুন

বড় মহাকাল - ৯১)

স্যার সকাল ১১.০০ টাতেই চলে এলেন রামপুর থেকে৷ এ অফিস, ও অফিস হলো। ও অফিসে নতুন আধিকারিকদের নবীন বরণ ও সকল পরিদর্শকদের সাথে লম্বা মিটিং হলো। তারপরে আমরা বেরোলাম পোলিং স্টেশান সমূহের অবস্থা দেখতে৷ এই অবস্থা বা ব্যবস্থার কেতাবি নাম এ.এম.এফ বা অ্যাসিওর্ড মিনিমাম ফেসিলিটিস। Ramp উইদ হ্যান্ডরেল, টয়লেট (মহিলা ও পুরুষ), পানীয় জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ এসবই পোলিং স্টেশানের এএমএফের অন্তর্ভুক্ত। তারপরে লাঞ্চ করেই ডুয়ার্সকন্যায় প্রশাসনিক মিটিং। সেখানে এ ঘর, ও ঘর করে আমার অফিসে ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি শুরু হলো অসময়ে।

স্যারের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়েছে জয়ন্তীর পি.এইচ.ই-র গেস্ট হাউজে। “সুজিত যাবে না?” “নাহ্ স্যার, করিমদা যাচ্ছে আপনার সাথে।” করিমদা আজ মোটা ইতালিয়ান কাপড়ের সাফারি আর ব্রিটিশ ওয়াকারের মারাত্মক ফর্মাল চামড়ার জুতো পরে এসেছে৷ অফিস ব্যাগ ছাড়াও তার কাছে একটা হাল্কা প্যারাশ্যুটের পীঠব্যাগ আছে। তাতে ঘরে পরার হাল্কা জামাকাপড় আর টয়লেট কীট আছে। মানে, বাইরে রাত্রিবাস করতে হতে পারে সে ব্যাপারটা করিমদার মাথায় ছিলোই৷ স্যার আমার চেয়ারে বসে কাউকে ফোন করছেন, “কিরে আর কতদূর?” আমি সুজিতের দিকে তাকিয়ে ইশারা করি, কে? সুজিত নীচু স্বরে বলে, স্যারের একজন বন্ধু আসবেন, জয়ন্তীতে স্যারকে সঙ্গ দেবেন৷ আগামীকাল স্যারের জলপাইগুড়ি পরিদর্শন। সেখান থেকে কেউ না এলে, আমাদের গাড়িটাই স্যারকে জলপাইড়িতে ড্রপ করে আসবে, এরকমই পরিকল্পনা ছিল।আমি সাহস করে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কোথা থেকে আসছে আপনার লোক? কী নাম?
নাম শুনেই আমি তার ধাম-টাম বলে দিতেই, স্যার বললেন, ওহ্ হ্যাঁ, সুরজিৎকে তো তোমার চেনারই কথা। শিলিগুড়ি কানেকশনস। আমি নিচে নেমে সুরজিৎকে গালাগাল দিয়ে ফোন করি, এত দেরি কীসের বুম্বা? সন্ধ্যা হতে চললো! একটু পরেই বুম্বা আসে৷ বুম্বা কেমন মোটা হয়ে গেছে, গালে আর পেটে। বুম্বা কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে দাঁতে আর মুখে৷ রজনীগন্ধা, রজনীগন্ধা৷ ফুল নয়, পান মশলা। সাথে ১০০ জর্দা৷ বড় প্যাকেট, ছোট প্যাকেট। মিশিয়ে ঝপাৎ। তারপরে সরকারি বাসস্ট্যান্ডের পেড টয়লেটের মতো অপরাধপ্রবণ সুবাস। সেদিন ছুটির দিন। স্যারের আগমন উপলক্ষ্যে সবাইকে আনা করেছিলাম। তারা সবাই ততক্ষণে চলে গেছে৷ সুজিত কোচবিহার থেকে যাতায়াত করে, সেও যাই যাই করছে। একজন এস.আই আর বড়বাবুকে অগ্রগমন করিয়ে দিয়েছি জয়ন্তীর সেই বাংলোর উদ্দেশ্যে৷ তারা ছোট মাছ পৌঁছে দেবে, বিধি ব্যবস্থা দেখবে। স্যার বললেন, চা খাবো, লিকার, চিনি কম। কাকে পাঠাই? কাকে আনাই? প্রখ্যাত ও সর্বজনীন দেওর বাপি আলমকে ফোন করি। বাপি তার স্বভাবসিদ্ধ নম্রতার সাথে জানায়, আমি এখন স্টেশানে, কিন্তু চা পৌঁছে যাবে। মিনিট দশেক সময় দিন, কাশীদার বড় ছেলেটা আর শৈলেনদা যাচ্ছে। সেই চা বিস্কিট খেয়ে বুম্বা সুরজিতের আনা বোলেরো গাড়িতেই আমরা রওনা দিই।

দমনপুর, মধু গাছতলা, পানি ঝোড়া, পাম্পু বস্তি,রাজা ভাতখাওয়া পার হতে হতেই সূর্য অস্তাচলে। তারপরে গেট,গেট। বক্সা টাইগার রিজার্ভ। আমি নেমে বলে আসতেই, ও হো হো করে গেট খুলে গেলো৷ শিমুল,শাল, খয়ের, সেগুন, শিশু, দেবদারুদের সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে তেইশ মাইলের মন্দির, ২৫ মাইলের রাস্তা পার হতে হতে আমরা কোনও বন্যের দেখা পেলাম না আজ। স্যারকে দেখাতে পারলে ভালো লাগতো৷ তারপরে বক্সা মোড়। বাঁদিকে সান্তালা বাড়ি হয়ে বক্সা, ডানদিকে গেলে জয়ন্তী। আমরা ডানপন্থি হলাম। বালা নদীর ব্রিজ পার হতে হতে সেই বাইসনের হতচকিত আক্রমণে বাইক আরোহীর অবাক মৃত্যুর কথা বলাবলি করছিলাম বড় মহাকাল - ১০আমরা। ততক্ষণে ভর সন্ধ্যা। গাড়িতেই প্ল্যান হলো আগামীকাল সকালে বের হয়ে প্রথমে আমরা মহাকাল দর্শনে যাবো। সুসজ্জিত, পুষ্পরাজি শোভিত গেস্ট হাউজে আমরা যখন ঢুকলাম তখন অগ্রগমনকারীদের কাছে জানতে পারলাম, আমাদের এই বয়সে আর এই বাদল বাদল সময়ে ছোট মহাকালই যাওয়া উচিত। বড় মহাকালে তারাও কখনও যান নি। খুব দুর্গম নাকি রাস্তা। চা-স্ন্যাক্সের পরে স্যার তার রুমে লম্বা হলেন। দারুণ সুন্দর এই বাংলোর দোতলায় আমরা। রুমগুলোর পেছনে বড় ও টানা ব্যালকনি। ডানে বাঁয়ে অনেক প্রাইভেট রিসোর্ট।সামনে জয়ন্তী নদীর বাধ। তারপরে ছোট বড় পাথর পাতা বালি বালি নদীর বিছানা। মাঝে মাঝে সাইজ জিরো জলধারা। তারপরেই সবুজ সবুজ জয়ন্তী পাহাড়। কিছু পাহাড় আমাদের, বাকিটা ভুটানের। আমি, বুম্বা, এস.আইসাহেব ও বড়বাবু টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়ি নদীর দেখা করতে। তখনও চুপ বৃষ্টির টুপ টাপ ফোঁটা চলছিলো। নদীর মাঠে হাঁটতে হাঁটতে নদীর জলে ছোট মাছের দৌড়োদৌড়ি ক্যামেরাবন্দী করে ফিরে আসি আমরা। সেই মাছশিশু কি জানে তার ভবিতব্য? জয়ন্তীর এই বুকে যথাবিহিত ড্রেজিং না হলে, যে কোনও বর্ষায় প্লাবিত ও নিশ্চিহ্ন হতে পারে এই জয়ন্তী নামের ফরেস্ট ভিলেজ কিংবা গোটা সংরক্ষিত ক্ষেত্র (৭৬০ বর্গ কিমি)। ১৯৮৩ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার পরে এখানে বালি পাথর উত্তোলনের কাজ আর ডলোমাইটের ব্যবসা বন্ধ৷ রেল লাইনের অস্তিত্ব আর নেই, ব্রিজের দুটো পিলার দৃশ্যমান কেবল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে ডলোমাইট উত্তোলনের কাজ তো চলছেই। ফলে জয়ন্তী নদীর বুকে জমা হচ্ছে চুন, বালি, পাথর। নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে কবেই। কিন্তু বর্ষার দুরন্ত প্লাবনে যে কোনও বছর সৃষ্টি হতে পারে এক ধ্বংসের উপাখ্যান৷ টর্চের আলোয় তিরতির করে ছোটাছুটি করা নিরীহ এই মাছশিশু জানে না সেই কথা।

রাতের খাবার খেয়ে ওরা দুজন ফিরে যায় আলিপুরদুয়ার। আমরা তিনজন ব্যালকনিতে রাতের বারোটা বাজাই নানা কথায় আর ঝিঁঝির তানে। তখনও নদীর ওদিকটায় চলছিলো চলমান গাড়ির হেডলাইটের আনাগোনা। আমরা শুতে যাই। তার আগে আরেকবার বুম্বা রজনীগন্ধার প্যাকেট আর জর্দার পাউচ খোলে। মিলিয়ে মিশিয়ে ঝপাৎ। আমি গালাগাল দিলে বলে, বাইরে ঘুরতে এলে একটু বেশি খাই। বাড়িতে রেস্ট্রিকশান করে তো। লকডাউনের সময় সেই অসু্বিধা হয়েছিলো। আমারও ক্লান্ত লাগে। ঘুম ঘুম পায়। শুয়ে পড়ার পরেও বুম্বার কথা থামে না। স্যারের সাথে তার নানা জায়গায় ট্যুর ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরের অভিজ্ঞতা, তার চাকরি জীবনের নানা কথা, এখনকার ইলেকশানের খাটুনির কথা সে বলতেই থাকে। আমি প্রথমে বাক্যে, তারপরে পদে, তারপরে শব্দে, তারপরে সিলেবেলে, অবশেষে হুঁ হাঁ তে তার সাথে সঙ্গৎ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি।

বড় মহাকাল - ৬২)

পরদিন বেশ সকাল সকালে উঠলাম। বুম্বা ঘুমোচ্ছে। ভাবলাম এই সুযোগে আমি সকালের সারা কাম করকে রেডি হই। ব্রাশ মুখে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি স্যার কুড়ি মিনিট আগেই রেডি হয়ে বসে আছেন। সকালের রোদ পাহাড়ে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ। একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ ঘরে ঢুকতেই দেখি বুম্বা উঠে পড়েছে। “করিমদা, আমি একটু ফটাফট করে বাথরুম করে আসি, স্যার কি রেডি হয়ে গেছেন?” আর কী করা? আমি নিচের তলাতেই যাই। মুখ ধোওয়াও হবে, চা বলাও হবে। এসে অন্তত মাথা ধুয়ে নেবো, যদি স্নান করার সময় না পাই। স্নান না করে বাইরের কাজে আমি বেরোতে পারি না। অসুস্থ লাগে, মাথা ঘোরে। আমি নিচে গেলাম, মুখ ধুলাম, ওপরে চা পাঠালাম, নিজে চা খেলাম। তারপরে ওপরে এসে দেখি, ‘ফটাফট’ বুম্বা তখনও বাথরুমের ভেতরে। ওরে বেরো, ওরে বেরো করতে করতে দশ মিনিট হয়ে গেল। আমার আর স্নান ফান করা হলো না। দেখিই না একদিন পাহাড়ি রাস্তায় স্নান না করে বেরিয়ে কেমন লাগে। বুম্বা নিদান দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ এসে করাই ভালো। যা চড়াই শুনলাম।” পোশাক বলতে সেই সাফারি, সেই বাপি আলমের দেওয়া ওয়াচকোট, সেই চামড়ার মারাত্মক ফর্মাল জুতো। এসব পরে কেউ ট্রেকিঙে যায়? চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বুম্বা বলে, “ব্যাগ গুছিয়ে রাখো, চলো চলো, স্যার কিন্তু ১টার মধ্যে জলপাইগুড়ি পৌঁছবেনই। আমাকে আবার শিলিগুড়ি ঢুকে শালিকে বের করতে হবে। তোমার গাড়িটা তো ডুয়ার্সকন্যাতেই রেখে এলে কাল? তোমাকে দমনপুর মোড়ে ড্রপ করলে হবে তো?” আমি তার সব প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে সামান্য ব্যাগে সামান্য সামান ঢুকিয়ে স্যারের সাথে নিচে নামি। বাংলোর সামনে বাগানে কত ধরনের যে ফুল! বাইরে বাঁদিক করে তাদের নতুন ব্লক তৈরি হচ্ছে একটা। সামনে ছোট কোর্ট ইয়ার্ডের এক দিকে স্টাফ কোয়ার্টার্স আরেকদিকে পার্কিং। সুরজিৎ রজনীগন্ধা মুখে ছবি তুলে চলেছে। থেকে থেকে রজনীগন্ধা সামলে আমাদের কথার জবাব দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে থেমে আছি কেন? একবার গিয়ে স্যারের একটা কী জিনিস আর আমার ছাতাটা নিয়ে এলাম ওপর থেকে৷ বুম্বার ড্রাইভার (কাম গাড়ির মালিক) অমিত তবু নামে না৷ সে ছিল আমাদের ফ্লোরেই অন্য একটা রুমে৷ সে বেশ অনেকটা দেরি করে নেমে এমন হাবভাবে গাড়ি ঘোরালো মনে হলো রাস্তায় পুষিয়ে দেবে আর কি৷

বড় মহাকাল - ৮আমাদের বোলেরো নদীর বালি বিলাসিত পাথুরে বুক চিড়ে অনেকটা এগোল। তারপরে পাহাড়ের কাছে একটু মোটা নদীর দেখা পাওয়া গেল।সেই জলে বেশ স্রোত। সেই জলে নেমে বেশ শক্ত করে যখন পার হচ্ছিলো আমাদের গাড়ি, স্যার বললেন, “সুরজিৎ তোমার অল্টো এলে এ জিনিস পারত না।” আড়াই তিন কিলোমিটার গিয়ে আমাদের গাড়ি যেখানে থামলো, সে জায়গাটা বেশ মাঠ মাঠ। সেটা বক্সার পাহাড় শ্রেণীর পাদদেশ। সেখানে গাড়ি রেখে আমরা চারজন (ড্রাইভারসহ) রওনা হলাম৷ স্যার আগে আগে, তারপরে আমি, তারপরে অমিত, সব শেষে বুম্বা। কখনও আমি স্যারের পাশে, কখনও আগে। পাথরের বাঁয়ে,পাথরের ডানে৷ সদ্য শিবচতুর্দশী গেছে। ভান্ডারাগুলোর অস্তিত্ব চোখে পড়ছিলো৷ শিবচতুর্দশীর দুই দিনের মেলায় এই ভান্ডারাগুলো অকাতরে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করে সব ভক্তজনকে। কখনও ডানে বাঁয়ে মামুলি দোকান চোখে পড়ছে। জলের বোতল, চিপস্, ম্যাগি, পান মশালা, বিস্কুট,চা। সাড়ে সাতটার ঐ সকালে অনেক ঝুপড়ি বাড়ির সাদা সাদা মেয়ে বৌরা দাঁত ব্রাশ করছিলো জলধারার পাশে বসে৷ আমরা হেঁটে চলেছি, কখনও নদীর এপার থেকে ওপারে যেতে হচ্ছে, কখনও ওপার থেকে এপারে। মনে হচ্ছিল একটা নদীকেই বারবার ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে রাস্তার গম্যতা অনুযায়ী ওপরে উঠছি আমরা। কখনও বড় পাথরকে পাশ কাটাচ্ছি, কখনও তার ঘাড়ে চাপছি, কখনও মাথায়। গন্তব্য, বড় মহাকাল। কখনও বালির বস্তা, কখনও বাঁশের সাঁকো, কখনও কাঠের সাঁকো। কোথাও সাঁকোতে হাতল আছে, কোথাও নেই। আধ ঘণ্টা চলার পরে আর তিন সাড়ে তিনখানা ছবি তোলার পরে যখন গাছের ডালে তৈরি একটা মইয়ের সামনে থামলাম তখন মনে হলো আমাদের নদী পর্ব শেষ৷

এবারে শুধু চড়াই। চড়াই আমাদের কাজ। কিন্তু এই সরু সরু ডালের দেড় ইঞ্চি পেরেকে গাঁথা মই কি সাড়ে পঁচাশি কিলো নিতে পারবে? স্যার তো পটাপট উঠে পড়লেন। সাহস করে আমিও উঠলাম। অমিতও উঠলো। কিন্তু বুম্বা কই? ওহ্ সে তো অনেকটা পেছনে। আমরা জোর ডাকাডাকি করাতে সে এদিক ওদিক মোবাইল তাক করে বোঝালো, না না ছবি তুলছিলাম, মনোযোগ দিয়ে৷ কিন্তু সেই মই দেখে আমি কি করে বুঝবো আরও কত শত মই আছে সামনে? আরও কত পাক, কত দণ্ডী। আরও কত পাকদণ্ডী। সরু রাস্তার এ ধারে ও ধারে ফ্লেক্সে ব্যানারে নানা সেবা সমিতির নাম। ভোলে বোম সেবা সমিতি। মহাকাল সেবা সমিতি। ভোলে বাবা সেবা সমিতি৷ আর তার বেশির ভাগই আমাদের শিলিগুড়ির৷ বাহ্। কিন্তু ঐ সকালে কোনও সেবা সমিতির দেখা মিললো না। আমাদের পাশ কাটিয়ে যে অবাঙালি লোকটি সন্তর্পণে ও হাসি হাসি মুখে নামছিলেন, তাকে বুম্বা জিজ্ঞেস করলো, অওর কিতনা দূর হ্যায় ভাইয়া? এই তো আরেকটু। বলে, ভদ্রলোক নীচু স্বরে ড্রাইভার অমিতকে বললো, এভাবে বলতে হয়৷ ভক্তজনদের দিল তোড়না ঠিক নেহী লাগতা হ্যায়। চলিয়ে৷ তারপরে আমরা প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে আনত ধাতব মই পেলাম। কংক্রিটের সিঁড়ি পেলাম। সেই সিঁড়ির ধাপগুলো হাঁটু সমান, কিন্তু চওড়া নামমাত্র৷ সেই ধাপে পা রাখতে হয় সাইড করে৷ সাত নম্বরি পা সোজা রাখার স্থান সেখানে অকুলান। আমার ব্রিটিশ ওয়াকার জুতোর নাক আর গোড়ালি পাথরে ঘষে ঘষে রঙ উঠে গেছে কখন৷ তারপরে ভুটানি হরফের গেট৷ ওয়েলকাম। আমরা চড়তে চড়তে দেশত্যাগী হলাম। বুম্বা যথারীতি সবার পেছনে। ততক্ষণে আমরা ঘেমে নেয়ে একশা। ঐ সাফারি, ওয়াচকোট পরে কেউ পাহাড়ে ওঠে? আসলে আমার তো আর উপায়ও ছিলো না। একটা জায়গায় থামতেই হলো। অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো নিচের উপত্যকা। তার মাঝখান দিয়ে এঁকে বেঁকে চলেছে নদী। পাশেই একটা পামগাছ নিচের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। “করিম, চলো একটু রেস্ট নেওয়া যাক। ঐখানে সাইড করে বসো৷”, স্যারের প্রস্তাব। অমিতও এসে থামলো। সে বললো, “এতো খাড়াই বুঝি নি।” কিন্তু বুম্বা কই? ফোনও তো লাগবে না এখন। “আমারও এয়ারটেলে টাওয়ার নেই”, স্যার জানালেন। সম্ভাব্য কাল অতীত হলে বুম্বা দৃশ্যমান হলো। আসছি, আসছি৷ বুম্বা এলো ভালুকের মতো করে। হামাগুড়ি দিয়ে৷ মুখে ম্লান হাসি। স্যার বললেন, “পারবে?”, হাঁপাতে হাঁপাতে বুম্বা বলে, “হ্যাঁ, হ্যাঁ পারবো। তানিক জিরিয়ে নি।” তারপরে আবার আমরা হাঁটা শুরু করলাম। প্রথমে বুম্বা দুই পায়ে শুরু করে আমাদের মতো৷ একটু পরেই সে আবার ভালুকের মতো থপ্ থপ্ থপ্। একটু যায় আর থামে। থামে আর যায়। আমরা যাই আর দাঁড়াই৷ দাঁড়াই আর যাই। কিন্তু এভাবে কি যাওয়া চলে মহাকাল সন্দর্শনে? আমি আর স্যার সন্দিহান। রাস্তায় বুম্বার যদি কিছু হয়? ওকে কাঁধে নিয়ে কে নামবে? অমিত নিমরাজি। গেলেও আছি, নামলেও আছি, এরকম ভাব। “সুরজিৎ বসো, বসো”, স্যার আবার নির্দেশ দিলেন। যেখানে গিয়ে এবারে আমরা থামলাম, ততক্ষণে ঘণ্টা খানেক অতিবাহিত। সুরজিৎ পারবে? সে কোনও বড় মহাকাল - ৭উত্তর দেয় না। যে জায়গাটায় আমরা থামলাম, সেটা বেশ চওড়া, বাঁশের বাতার বেঞ্চিও বানানো আছে। আবার পাশে নলকায় ঝর্নার জলেরও ব্যবস্থা আছে। এদিকে ওদিকে মানুষের ফেলে যাওয়া জিনিসের নমুনাও বিন্যস্ত। সামনে পেছনে রাস্তা। দুদিকে গিরিখাত আর জঙ্গল। পথের বাঁকে বাঁকে এখানে অনুপম সৌন্দর্য নজর কাড়বেই। আমি ততক্ষণে সেইসব ফর্মাল জামাকাপড় খুলতে লেগেছি। সবই ভেজা। তাই দিয়েই গা মুছছি। কাকে দিয়ে কাকে মুছি তার ঠিকানা নেই। হঠাৎ দেখি আমার মোবাইলে টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে। সিগন্যাল, সিগন্যাল! ভুটানি টাওয়ারের। এই ভুটিয়া টাওয়ারের চক্করে কতবার আমার মোবাইল ভুলভাল টাইম দেখিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি করিয়েছে আমায়! হঠাৎ বুম্বা বলে, “আমার চেপেছে, খুব জোর চেপেছে।” আমার একহাতে তখন ফোল্ডিং ছাতা, একহাতে মোবাইল, কাঁধে সমস্ত জামাকাপড়। দাঁড়া, দাঁড়া। রাস্তার ধার থেকে দুটি বোতল কুড়িয়ে এনে তাতে ঝর্ণার জল ভরে এগিয়ে দিই, যা। বেশি দূরে যাস না ভালুক। তারপরে ফোন করি আলিপুরদুয়ারে। “হ্যালো, সোমনাথ, বড় মহাকালে গেছো কোনোদিন? শোনো না, আমাদের এখনকার লোকেশানটা বাঁশের বেঞ্চি আর কালো নলের মোড়। এতক্ষণ হেঁটেছি। আর কতক্ষণ হাঁটতে হবে? আর কতটা বাকি?” সোমনাথ ঠিকঠাক বলতে পারে নি। হঠাৎ স্যার বলেন, “এই দেখো আমার গুগল্ ম্যাপ। এই যে ছোট মহাকাল। এই যে আমরা এইখানে৷ এই যে লোকেশান অব বড়া মহাকাল। আমরা অর্ধেকের বেশিই উঠেছি। চলো, যাবো। চলো, যাবো। বুম্বাকে এখানে বসিয়েই না হয় যাবো।” ঠিক তক্ষুনি ওপরের পাহাড়শ্রেণি থেকে ঘন্টাধ্বনি ভেসে এলো, ঠং-ঠং- ঠং। সবার মন আনন্দে নেচে উঠলো। স্যার বললেন, ঠিকমতো ওপরদিকে তাকাও, দেখবে একটা পতাকা মতোন লাগছে কিছু, ঐখানেই মহাকাল ধাম হবে। অমিতের মুখ চোখেও আনন্দের ছাপ, “জয় বাবা ভোলেনাথ।” আমাদের ভোলেনাথ এলেন। বোতল দুটোকে ছুঁড়ে ফেলতে যাবেন, এমন সময় স্যার বলে ওঠেন, “ওরে আমিও হাল্কা হবো। এত হাই অল্টিটিউডে হাল্কা হবার অভিজ্ঞতা সবার কি থাকে?” অমিত বলে, “সকালে আমার হয় নি, কিন্তু আমি তাও যাবো না।” আমি বললাম, “বুম্বা তুই বস। আমরা ফিরে এসে তোকে পিকাপ করবো৷” কাতর বুম্বা রাজি হলো না তাতে। আমরা চারজনে আবার হাঁটা লাগালাম। সামনে একটা কাঁচা রাস্তা। পাথরটাথর তেমন নেই তাতে।কিন্তু এতো সরু যে মনে হলো চারতলায় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে এসে কার্নিশ বা সান শেড বেয়ে পালাচ্ছি। বুম্বা তখনও দুপেয়ে। আমরা খালি কখনও স্যান্ডো গায়ে, কখনও ওয়াচকোট গায়ে। ছাতা, মোবাইল, ভেজা জামাকাপড়, জলের বোতল রক্ষা করতে করতে অবশেষে পৌঁছে গেলাম মন্দির স্টপেজে। সেই চাতাল বা ভিউ পয়েন্টের একদিকে গুম্ফা। তার পাশে পাবলিক টয়লেট৷ আর সামনের দিকে কিচেন মতো৷ ওখানে গিয়ে আমরা থামলাম। সোজা মাথা তুললেই মহাকালের গুহাগুলো দৃশ্যমান হয়। কিন্তু সেগুলো তখনও বেশ উঁচু। এবার আমাদের পরিক্রমণ হলো দড়াবাজিকরদের মতো। একদম খাঁড়া সিঁড়ি। তারপরে অনুভূমিক মই। তারপরে গুহা পথ।সুড়ঙ্গ। শরীর বাঁকাও, শরীর কাত করো, শরীর গোল করো। আগে মাথা ঢোকাও, উঁহুঁ আগে পা বাড়াও। বসে বসে আসো। এইভাবে আমরা শেষ মাথায় পৌঁছোলাম। বড় মহাকাল - ৪বাঁদিকেই গেলাম প্রথমে৷ ততক্ষণে আমরা জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির একজোড়া দাদা- ভাই পেয়ে গেছি৷ তাদের হাতে লাঠি। পরিধানে স্যান্ডো আর বারমুডা। স্মার্ট। বাঁদিকে মহাকালী। এটা সতীপীঠ। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম৷ এখানে সতীর বাম জঙ্ঘা পড়েছিল। মহাকাল সেই ভার ধরে রেখেছেন। দেবীর নাম এখানে জয়ন্তী। দাঁড়ান, ভেতরে লোক আছে। ওরা বের হোক। দাঁড়ান মানে এখানে ‘বসুন’। দাঁড়াবার জায়গা নেই। এখানে হঠাৎ ঐ দাদা-ভাইদের সামনে ব্যাটা বুম্বা ‘করিমদা’ ‘করিমদা’ করে আদিখ্যেতা করতে লেগেছে৷ আর আমি এই উচ্চতায় মহাকালীর গুহার সামনে ভয় ভয় পাচ্ছি। কোথায় সর্বনাম পদে কথা বলবে, তা নয়। কিন্তু জলপাইগুড়ির ব্যায়ামাগারের মালিক আমার নাম টাম খেয়াল না করেই বললেন, “কোলকাতার ডিআইকে চেনেন?” আমি বললাম, “হ্যাঁ। খগেনদা। খগেন্দ্রনাথ রয়৷” “ওনাকে আমার নাম বলবেন।” স্যার মহাকালীতে সবার আগে ঢুকে পড়েছেন, অন্য পার্টির সাথে। আমাদের মাথার ওপরে তখন শিবের জটার অদ্ভুত কারুকাজ৷ ওপর থেকে ঝুলে ঝুলে আছে৷ এইগুলোর ভৌগোলিক নাম স্ট্যালাকটাইট। গুহার ভেতরে চুনাপাথরের জল চুইঁয়ে পড়তে পড়তে জমে গিয়ে তৈরি হয় স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট। ছাদ থেকে ঝুলন্তগুলোকে বলে স্ট্যালাকটাইট আর যার ওপরে আমরা বসে আছি তার নাম স্ট্যালাগমাইট। গুহার মেঝেতে সেই জল জমে তৈরি হয় স্ট্যালাগমাইট। অদ্ভুত সুন্দর সেইসব শিলার উপাদান লাভা, মিনারেল, কাদা,পীট, পিচ, স্যান্ড, সিন্টের আর অ্যাম্বারেট। স্যার বেরিয়ে এলেন। আমরা তিনজন একে একে ঢুকলাম। মহাকালীর সামনে ধূপের ধোঁয়া ও গন্ধে, মোম ও প্রদীপের আলোতে অবসন্ন শরীরে দারুণ এক অনুভূতি হলো। প্রদীপের আঁচ নিলাম। আমার কপালে সিঁদুরের তিলক পরিয়ে দিলো অমিত। বুম্বা গাঁদা ফুল তুলে নিয়ে বললো, তুমিও একটা রাখো। বুম্বা ভক্তিভরে প্রণাম করে চলেছে। বাইরে থেকে তাড়া মারে কেউ, বেরিয়ে আসুন। এ গুহাগুলোতে মাদাগাস্কার ব্লাইন্ড স্নেক নেই, ওয়াটার স্করপিও নেই, কেভ ব্যাটস্ নেই নিশ্চয়। কিন্তু অসীম শক্তি আছে। অনিবার আকর্ষণ আছে। এ তল্লাটে হয়ত মহাকালের প্রাধান্য বেশি। এই অদ্ভুত সুন্দর ও দুর্গম্য প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি হতেই হবে শক্তিই প্রকৃতি। সব শক্তি প্রকৃতিতেই বিরাজমান। প্রকৃতির সাথে শক্তির এ এক অদৃষ্টপূর্ব মিলনের জায়গা। ওদিকে গুম্ফা, এদিকে মহাকাল৷ এ স্থান দু’দেশের মিলনেরও কথা বলে৷ কিন্তু এখন যদি ভূমিকম্প হয়? আমাদের মাঙ্কি মাইন্ডে মনে পড়ে যায়, ২০১২ আর ১৫ র ভূমিকম্পে যখন কিছু হয় নি, এবারও হবে না। এবারে আমরা ডানদিকে যাবো। আসল গন্তব্য। মহাকাল। বড় মহাকাল৷ সেই গুহা। এখানেও যথারীতি ছোট ছোট গ্রুপে যাওয়া, থামা, আসতে দেওয়া, তারপরে অগ্রসর হওয়া। মাথার ওপরে স্ট্যালাকটাইটের ছাতা। এখানে ওখানে চুঁইয়ে পড়ছে জল। স্যার আগেই ঢুকে পড়েছেন মহাকালের গুহায়। আমাদের টার্ন এলো৷ স্যার তখনও ভেতরেই। অমিতের পেছনে আমি হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে দেখি গুহার মুখ আমার পক্ষে অগম্য। ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরকে টানলে যেমন হবে, তেমনি তার আকার। কিন্তু একেবারেই চাপা। আমি গুহার দিকে করুণভাবে তাকালাম, “স্যার আমার দ্বারা হবে না।” ততক্ষণে শরীরটাকে নানাভাবে ম্যানুভারিং করতে করতে কোমর ব্যথার চাটনি করে ছেড়েছি। বড় মহাকাল - ১আর ব্যথা নেই কোমরে। স্যার আমাকে একটা পা ঢোকাতে বললেন। ভেতরের কাউকে বললেন আমাকে টানতে৷ পুরোহিত চিৎকার করে উঠলেন, “কোই মদত নেহী করেগা। ইঁয়াহা বাচ্চা বাচ্চা, বুড়হা বুড়হা আতা হ্যায়। কোই কিসিকো মদত নেহী করতা হ্যায়। বাবাকা ইচ্ছা হ্যায় তো…।” আমার এক পা ভেতরে, কোমর মাঝখানে। টরসো আটকে আছে এস আকৃতি অ্যাপারচারে। আমি মাথা ঢোকাবার চেষ্টা করতেই মনে হলো, আরে এই অ্যাপারচারে তেল লাগানো নাকি? এতো পিচ্ছিল! ঝুপ্ করে কী একটা হলো। আমি হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করলাম গুহার ভেতরে। মাথার ওপরে ওল্টানো শঙ্কু। তার থেকে নেমে এসেছে স্ট্যালাকটাইটের ঝালর। ভেতরে শিবলিঙ্গের সামনে এখানেও প্রদীপ, ধূপ, ধোঁয়া। ঠায় বসে রয়েছেন পুরোহিত। তিনি দেখাতে থাকলেন এই দ্যাখ শিবলিঙ্গ, সাপ, শঙ্খ, গদা, কার্তিক, গনেশ…. আর তুই যেখানে হাত দিয়েছিস, সেটা বাবার হাত। এই যে বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠা। এখানে এসেছিস, যা চাইবি তাই পাবি। মনের সকল আশা পূর্ণ হবে। এত কষ্টে, এত ঘেমে মহাকালের সামনে পৌঁছে সব কষ্ট ততক্ষণে ভুলে গেছি। বুঝে গেছি এই দেবতা কেন এত দুর্গম জায়গায় তার স্বাক্ষর রেখে গেছেন বারবার। মহাকাল তো সময়ের অতীত। তিব্বতি ভাষায় ‘নাগপো চেনপো’। তিনি শিব, তিনি রুদ্র, তিনি নিরবধি, তিনি অনন্ত।

বেরিয়ে আসার সময় আমার প্রতি নিদান হলো বাঁ পা আগে দিন। কিন্তু আমি কেমন ডান পা আগে করেই বেরিয়ে আসতে পারলাম। অবতরণের বেলা বুম্বাকে নিয়ে চিন্তা হলো। বুম্বা ততক্ষণে শক্তিমান। তাই তার হামাগুড়ির ব্যাখ্যা চলছেই। “আসলে কী বলতো, এবার মনে পড়ছে, সকালে উঠে আজ থাইরয়েডের ওষুধটা খাইনি।” হা, হা, হা। আমরা নামছি, ধীরে ধীরে। ততক্ষণে রাস্তায় ভিড় বাড়ছে। বেশির ভাগ লোকের হাতে ছড়ি, ওয়াকিং স্টিক। সবারই প্রশ্ন, আর কতদূর? আমাদের উত্তর, এই তো! ভোলে বাবা পার করেগা৷ দু’জায়গায় সিঁড়িতে শুয়ে পড়া আরোহীর দেখা মিললো৷ একজনের মুখ চোখে তার সঙ্গী জল ছিটিয়েও জাগাতে পারছিলো না। আমরা আর থামি নি। সাতটার মধ্যে বেরিয়েছিলাম সকালে৷ ওদিকে ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে ঠান্ডা হয়ে আছে৷ স্যারকে জলপাইগুড়ি, বুম্বাকে শিলিগুড়ি ঢুকতে হবে সময়ে৷ গেস্ট হাউজে গিয়ে আর স্নান ফান করা হবে না। কিন্তু গাড়িতে ব্যাগ ফ্যাগ তুলতে তো হবে। ভেজা জামাকাপড় পাল্টাতে তো হবে। আর আমাকে নামতে হবে দমনপুরে৷

বড় মহাকাল - ২সোমনাথকে ফোন করে দিই, “এসে নিয়ে যেও৷” “হ্যাঁ স্যার, আমি অগ্রিম পৌঁছে যাবো। গেস্ট হাউজ ছাড়ার সময় খালি একটা ফোন করে দেবেন।” আমরা সাত তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে গাড়িতে জিনিসপত্র তুলে ওখানকার কুকদের বকশিস দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। করিমদা, ছাতা নিয়েছো? হ্যাঁ। ভেজা কাপড়গুলো? হ্যাঁ। ওষুধ খেলি? হ্যাঁ। চল্ চল্। স্যার বলছিলেন, যতগুলো জায়গায় ট্রেকিং করেছি, এটা সেই হিসেবে দ্বাদশ আর এটাই ছিল টাফেস্ট। অমিতের গাড়ি হুড়মুড়িয়ে পার হলো ৩৩ কিমি জঙ্গল পথ। ঐ যে স্যার আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে টাটা টিগর আর মাঞ্জা দেওয়া সোমনাথ। ক্লিন সেভড্। জিনস্, টী-শার্ট। বোলেরো থামলো৷ স্যার বললেন, কম সময়ে খুব ভালো হলো আমাদের থাকা। খুব ভালো হলো আমাদের অভিযান৷ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি নামলাম। সোমনাথের গাড়িতে উঠে বললাম, “গাড়ি ঘোরাও।” “আবার জয়ন্তী? কেন? স্নান খাওয়া কিছুই তো হয় নি।” আমি বললাম, “ঘোরাও না।” গেস্ট হাউজের কেয়ার টেকারকে ফোন লাগাই, “রাজীব, তোমাদের কাবার্ডে আমি গাড়ি আর রুমের চাবি ফেলে এসেছি!”