একটি অবৈতনিক বেড়ালের বহির্গমণ পথকে আমি দরোজা বলে ডাকি। মার্জারটির প্রবেশ পথটি অজানা, ছায়ারঙে আঁকা প্রস্থান পর্বটিই মূর্ত । গৃহবধূদের বেতন দেওয়ার দাবি উঠলেও বৈতনিক বিড়াল এখনও অস্তিত্বহীন৷ অথচ পিতা এবং পিতামহ যে পুকুর পাড়টি ধরে গেরস্থালির দিকে হেঁটে যেতেন, সে পথেও এই বিড়ালটি অপেক্ষায় থেকেছে। কনে দেখা আলোয় উদ্ভাসিত চোখ। ঠাকুরমার মায়াময় হেঁসেলেও তাকে দেখা যেত। সরপুঁটির ঘ্রাণ নিতে নিতে বাকসিদ্ধ হয়ে ওঠা মার্জার মুহূর্তেই নভোচারী। মায়ের আঁচলের খুঁট থেকে যে নীল পরীটি খসে পড়ে, অথবা বাকি সব পরী যাদের আগামীতে উড়ে আসার কথা, সবাইকে ওম দিয়ে কল্পতরু হয়ে ওঠা বিড়ালটির তখনও একটি সুনির্দিষ্ট প্রবেশ ও প্রস্থান পথ ছিল। আড় বাঁশির আর্তি মাখতে মাখতে গুলিয়া নামের যে কিশোরীটি ব্যারিকেড ভেঙে ফেলত, ডুডু মাহাতোর পকেট থেকে গড়িয়ে পড়া বাউণ্ডুলে মার্বেল, অথবা অমাবস্যার আকাশ থেকে জোনাকি পিসির চাঁদ পেড়ে আনার উপাখ্যান, এসব দরকারি এবং অদরকারি মোমদানি ঘিরে বিড়ালটির উপস্থিতি ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মধুময় শৈশবের পথ যেখানে ঠাকুরমার হাতপাখাটিই মাইলস্টোন, সেই রচিত অথবা নির্বাপিত অভিমানের বিষাদনগরী ছুঁয়ে বিড়ালটির বয়ে যাওয়া, সয়ে যাওয়া, এমনকি রয়ে যাওয়ার বৃত্তান্তটিও লিখে ফেলার কথা ছিল। সামাজিক দূরত্বের নিদানে আড় বাঁশি, ডুডু মাহাতো, গুলিয়া এবং জোনাকি পিসিরা ক্রমশ অসামাজিক হয়ে উঠতেই বিড়ালটিও আগন্তুক হিসেবে বিবেচিত হল। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং খোদিত দরোজাটি আর প্রবেশের কাজে লাগেনা, প্রস্থানের জন্যই বলিপ্রদত্ত।
একটি অবৈতনিক বেড়ালের বহির্গমণ পথকেই আমি দরোজা বলে ডাকি।
ছবি: চিত্রদীপ দাশ