বীণাপানি
ধুলো মেখে পড়ে আছে তার-ছেঁড়া বীণা
আমাদের বাড়িতে সকল প্রকার জিনিষ আর ওই রুদ্রবীণাটি।
আমার বাবা যখন পাহাড়ি রাগ বাজাতেন
শ্রোতাবন্ধুগণ বলে উঠতেন, সামনে তাঁরা পাহাড় দেখছেন
বাবা যখন নাকি মেঘরাগ বাজাতেন
ভারতীয় জলপতনের শব্দ শোনা যেত
আমরা এ-প্রজন্মের লোক এসব ভালো বুঝি না
তবু, যাই, দেখি তো, ব’লে হঠাৎ একদিন রাতে
চুপি চুপি পুত্রের পাশে শুয়ে পড়ি,
সিঁধেল চোরের মতো ওর স্বপ্নের মধ্যে ঢুকি– দেখি, সকাল-সকাল
একদম স্নানটান সেরে ও গুচ্ছের ফুল গুছিয়ে রাখছে
মিনেকাটা ব্লু ফ্লাওয়ারভাসে,
বলে– ‘বাবা, যাও দরজা খোলো, দেখো,
বীণাপানি এসেছেন কিনা!’
টেম্পারা ও সেই অবলুপ্ত হরিণী
এই সেই অবলুপ্ত হরিণী, চিত্রার্পিত, যাকে খুঁজে পাওয়া গেছে
শিকারের ঠিক পূর্বে যাকে উঠিয়ে এনেছেন চিত্রকর,
টেম্পারায়।
দেহ অবলুপ্ত করে মুখটুকু ভাসিয়ে রেখেছেন
রাত্রির আকাশের সুপ্ত নীলিমায়।
মৃত চাঁদের চতুর্দিকে সফেদ-নীলাভ অনচ্ছ জ্যোৎস্নায়
চাঁদের ওষ্ঠপুট-পাশে তন্দ্রালু হরিণীর মুখ।
দর্শকের বিষাদপ্রিয় চক্ষু ফের তাকে অরণ্যে পাঠাল।
আবার সেই কচি ঘাসের গন্ধ, ভয়াতুর শাবকপাহারা, চারণভূমির স্পর্ধা
খুরের নিচে বিশ্বাসবতী দৌড়-শেষে সমাপ্তির অবিরাম গাঢ় অন্ধকার…
ছুঁয়ে দিলে জেগে উঠবে এই বিশ্বাসে গর্ভিণী একছুটে গিয়ে থেমেছিল বিবর্ণ সাদা ক্যানভাসে।
চিত্রকরের মৃত্যুর পর কয়েকটি ব্যাঘ্রশাবক প্রসবান্তে
পট থেকে নেমে, পুনশ্চ সুদূর ঘন পাইনের বনে, হায়
একছুটে হারিয়ে গেল পটের হরিণী কোথায়!
ছবি : চিত্রদীপ দাশ