দুটি কবিতা
5/5 - (1 vote)
ভালবাসা এসে দাঁড়ায়

সুজন মল্লিকের ছবি

আমার ভালবাসার সন্ধান
যেন কোন এক হারিয়ে যাওয়া চাহিদার ভাষা—
সীমিত জোগানের মাঝে যে ভাষা ধুঁকতে থাকা, মৃতপ্রায়।

কিন্তু তবু, কিছু কিছু অমুল্য ক্ষণের জন্য, কিছু কিছু স্থানে
ভালবাসা এসে দাঁড়ায়—
হঠাৎ জ্বলে ওঠা, ক্ষুধার্ত আগুনের আঁচে,
প্রিয় মানুষের অস্থিতে, পোড়া ছাই-এর গন্ধে।

চকিতে রোদ্দুরের তাপ লাগা কোন এক চোরাগোপ্তা ডেরায়
অন্ধকার, অনাবশ্যক কোনে-খাঁজে
স্বপ্ন-শিশুরা ভেসে বেড়ায়—আমি দুচোখ খুলি, বন্ধ করি, দেখে ফেলি অতর্কিতে।

কিন্তু তবু, কিছু কিছু অমুল্য ক্ষণের জন্য, কিছু কিছু স্থানে
ভালবাসা এসে দাঁড়ায়—
নিস্তব্ধ, কথা না হওয়া কার-রাইডে, উস্কানি-প্ররোচনা-নিয়ম লঙ্ঘনের ছদ্মবেশে।

এখনো কি জানো না আমার এক একটি নিভৃত রাতের কাহন?
এক একটি মুহূর্তের গিলে খাওয়া নিঃশব্দতা?
তালাবন্ধ ঘরের নেপথ্যে যখন আমাদের শব্দেরা খান খান হয়ে ভাঙে, রক্তাক্ত হয়?

কিন্তু তবু, কিছু কিছু অমুল্য ক্ষণের জন্য, কিছু কিছু স্থানে
ভালবাসা এসে দাঁড়ায়—
আমাদের-ই প্রাত্যহিকের পৃথিবীর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়,
যখন আমি ঘুরে-ফিরে বেড়াই, অযথা বেমানান।

যুগের পর যুগ—তুমি আমি ঘুরে মরেছি স্মৃতির বাতাসে
পরিচিত শহরের, পরিচিত আকাশের ঘ্রান নিয়ে, আজন্মের ভিটের শিকড়ে।
মরিয়া হয়ে খুঁজেছি হৃদয়ের নোঙ্গর বাঁধা কোথায়—
কোন গভীরে প্রোথিত ক্ষতচিনহের ইতিহাস।

কিন্তু তবু, কিছু কিছু অমুল্য ক্ষণের জন্য, কিছু কিছু স্থানে
ভালবাসা এসে দাঁড়ায়—
তুমি এসে আমার পাপগুলি স্পর্শ করো,
আর আমাদের অন্ধকার যুগল শরীরে মুক্তির আগল খুলে যায়।

ছবি: সুজন মল্লিক

অনুবাদ কবিতা
আমি কোনো ছবি আঁকবো নাএমিলি ডিকিন্সন
[মুল ইংরিজি কবিতাআই উড নট পেইন্ট—আ পিকচার—’]

না, আমি কোনো ছবি আঁকবো না—
বরং—আমি একটি ছবি হয়ে উঠবো
তার উজ্জ্বল, অসম্ভব উপস্থিতি, যার রেশ থেকে যায়, সুস্বাদু
সেই আঙুলগুলির মাঝে, ওরা অপার বিস্ময়ে অনুভব করে
স্বর্গীয়—বিরল—তাদের নাড়াচাড়া,
কত স্নিগ্ধ, মিষ্টি যন্ত্রণার আভাস জাগিয়ে দিয়ে যায়—
কি ভীষণ রাজকীয় সে নিরাশা, সে যন্ত্রণা।

সুজন মল্লিকের ছবি

না, আমি কোনো কথা বলব না—সেই মিষ্টি বাঁশির মত
বরং, সেই বাঁশিটিই হয়ে উঠবো
যে বাঁশি সিলিঙয়ের পানে উত্থিত হয়ে থাকে– কোমল সুরে,
আর তার পরে—অনায়াসে, গ্রামগুলির ইথার তরঙ্গে ভেসে যায়।
কল্পনার বেলুনে ভাসমান আমি—কিন্তু ধাতব ঠোঁট
আমার পনটুন নৌকার জেটি।

না, আমি কবি-ও হতে চাই না।
বরং এই তো শ্রেষ্ঠ আরও—কানের অধিকার নিয়ে
প্রেমমুগ্ধ, আনন্দিত, অক্ষম–
অনুমতি আছে পূজা করার, শ্রদ্ধা করার
তবে সেই বিশেষ অধিকার বড়ই ভয়ানক।
আমার মধ্যে যদি সেই শিল্প ক্ষমতা থাকতো
নিজেকেই আশ্চর্য করার, সঙ্গীতের বজ্রনির্ঘোষে—
শিল্পী কি করত তবে?

ছবি: সুজন মল্লিক