আমাদের মধ্যে অনেকেই একটা সময় ছাপাপত্রিকা সম্পাদনা করেছি। কমবেশি কিছু অভিজ্ঞতা আছে। এখন সময় অবশ্য পাল্টে গেছে। ম্যাগাজিনের পাশে জায়গা পেয়েছে ওয়েবজিন। ঢেউ আছড়ে পড়েছে বিশ্বময়। গ্লোবালাইজেশন, লোকালাইজেশন ইত্যাদিরা হাত ধরাধরি করে চলেছে। এক পা গ্লোবে তো আরেকটা জঙ্গলমহলে। গৌতম মালাকার, তনুশ্রী ভট্টাচার্য আমেরিকায় তো নিখিলেশ রায় কোচবিহারে। দূরত্ব, দূরত্বহীনতা। কোভিডপরবর্তী সময় ও পৃথিবী সম্ভব করে তুলেছে আরও একবার পাশাপাশি এসে একটা ডিজিটাল ম্যাগাজিন প্রসব করার।
পেন্নাম হই কবিগুরু, মারাংবুরু :
‘কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে।
বল্ দেখি তুই মালী, হয় সে কেমন করে।‘…শৈশবের সেই বিস্ময় আজও আমাদের ঘোরের মধ্যে রেখেছে। বয়স বেড়েছে কিন্তু ঘোর এতটুকুও কমেনি বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল—’অমল ও দইওআলা।’ দইওআলা খুব টানতো। অমলের জন্য কান্না পেত খুব। মন কেমন কেমন করতো। বেচারা কোথাও যেতে পায় না। কী একটা অসুখ! এখন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও দেখছি দইওআলার জন্য সেই আগের মতোই সমান টান আর অমলের জন্য সেই এক মনখারাপ। একই লেখা কোন যাদুতে এভাবে শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর প্রৌঢ়ত্বকে একই সরণিতে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়! আসলে মনের নৈকট্যের কাছে বয়সের ব্যবধান বড় নয় কখনো। অমলের বন্দিদশার আলাদা কোনো মানে আছে যা ‘মানেবই’এ নেই। সেজন্য প্রৌঢ়ত্ব, যৌবন, কৈশোর, শৈশব সব একাকার হয়ে যায় অনুভূতির আঙিনায়। ‘ফাল্গুনী’র চন্দ্রহাসের সংলাপকে সামান্য বদলে নিয়ে তাই এ কথা বলাই যায় রবীন্দ্রনাথ ‘বারে বারেই নতুন (প্রথম) ফিরে ফিরেই নতুন (প্রথম)।’ আসলে রবীন্দ্রনাথ এক পূর্ণাঙ্গ জীবনপরিক্রমা। পত্রিকার প্রথম প্রকাশের সঙ্গে এই বিস্ময়মানব জুড়ে থাকুন সেজন্য ২৫ বৈশাখ বা ২২ শ্রাবণ ‘শব্দেরা’ মুক্তি পাক—প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক গৌতম সেটাই বার বার আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন। আজ ২২ শ্রাবণ। পত্রিকার শব্দযাত্রা।
হ্যাঁ, রুটিরুজির প্রশ্নে আমরা ছড়িয়ে রয়েছি। ‘শব্দেরা’ পুনর্বার আমাদের জড়িয়ে ধরেছে। যে যেখানে থাকুন এগিয়ে আসুন। পরস্পরকে স্পর্শ করুন। লিখুন। নতুনের পাশে ফিরে আসুন পুরোনো বন্ধুরা। আসুন স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে ভাস্কর চক্রবর্তী সহসা বলে গেলেন :
ছিলাম খেলায়
মগ্ন , ওগো
সহসা শুনেছি আজ
নদীর ওপার থেকে
ঘুমের ওপার থেকে —
‘লেখো লেখো ,
ইডিয়ট , লেখো ।’