‘এঁড়ে বাছুর জন্মেছে !‘…
‘The man to whom I have applied has the genius and wisdom of an ancient sage, the energy of an Englishman and the heart of a Bengali mother’—
মায়েদের, মেয়েদের নেতৃত্বে অন্ধকার তাড়ানোর গণআন্দোলনে দিগন্ত তোলপাড়। সুরক্ষা ও অধিকার চেয়ে মেয়েরা রাতের স্বাভাবিক ও ‘সিম্বলিক’ দখল খুঁজছেন। খুঁজবেন। বিদ্যাসাগর বাস্তবিক খুঁজেছিলেন। বিশ্বাস করতেন নারীদের ‘নিজস্ব কক্ষ’ চাই। চাই-ই।…
যে জিনিসটা আজ বাঙালি হারাতে চলেছেন অথবা হারিয়েই ফেলেছেন সেটাই ছিল বিদ্যাসাগরের চালিকাশক্তি। জেদ>সংকল্প>মেরুদণ্ড।
নির্বিচারে কিছুই মেনে নেননি। ভগবানে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু মা-বাবাকে ভগবানের মতো ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন। এগিয়ে ছিলেন তাই একা ছিলেন। এগিয়ে ছিলেন তাই সময়ের হাজারো কটূক্তি, অসম্মান সহ্য করেছেন। মানুষের কল্যাণই ছিল কর্মমন্ত্র। গদ্যভাষা, নতুন চিন্তাচেতনা, প্রশ্ন ও প্রতিপ্রশ্ন, শিক্ষা ও সংস্কার সর্বার্থেই বাংলা ও বাঙালির ‘জনক’ ছিলেন। চমকে ফিরে ফিরে তাকাই। নাতিকে নিয়ে পিতামহ রামজয় তর্কভূষণের ‘এঁড়ে’ মস্করা। মহাকবির মহাবিশ্লেষণ ও বিশেষণ। ‘বীরাঙ্গনা’ উৎসর্গের জন্য সঠিক ‘ব্যক্তিত্ব’ নির্বাচন। এখন চারিদিকে ব্যক্তিদুর্ভিক্ষ। পচা মানুষের ভিড়। ব্যক্তিত্বের বড়ই অভাব।
হ্যাঁ সাগর মশাই, এঁড়ে বাছুরের এক অত্যাশ্চর্য জীবনপথ আপনার। সেই পথের যাত্রাক্ষত, সংগ্রাম ও সৌন্দর্য আপনাকে অসীমালোকের মর্যাদা দিয়েছে। আপনার জীবন এক অনমনীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত। সমকাল আপনাকে স্বীকৃতি দেয়নি। বলা ভালো স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করেছে।
‘শব্দেরা’ নতজানু আজ। শব্দেরা চায়, শব্দেরার একান্ত দাবি, আপনার জন্মদিন ২৬ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষক দিবসে’র মর্যাদা পাক। কূপমণ্ডূক বাঙালিকে চাবুক মেরে চনমনে করার জন্য, বিচলিত এবং শায়েস্তা করার জন্য আপনাকে আজও সমান প্রয়োজন।
হে নাস্তিক হে ঈশ্বর হে পথিকৃৎ হে শিক্ষক হে সৈনিক আপনাকে অবিনশ্বর প্রণাম।…
সমকালের কত ‘ঋষি ও মনীষী’ আপনাকে পণ্ডিত না ভেবে মূর্খ ভেবেছেন! বঙ্কিম কটাক্ষ ছুড়েছেন। বোঝেননি। চিনতে পারেননি! এখনো বা ক’জন চেনেন বা বোঝেন সন্দেহ হয়। রবীন্দ্রনাথ সঠিক বলেছেন আপনি ‘এই বঙ্গদেশে একক’ ছিলেন। হ্যাঁ আপনি আজও ‘একক’! বন্ধুর জীবনপথে আপনার একমাত্র বন্ধু ছিল নৈতিকতা। সেখানে কোনো আপোশ ছিল না।
‘হে প্রগাঢ় পিতামহ’ আপনি কি সত্যিই একদা এ বঙ্গদেশে জন্মেছিলেন!…
ছবি: উর্বি ইসলাম