-গাবৌ-গাব
5/5 - (1 vote)

-“ভাইয়া,জারা সিধা হোকে খাঁড়া রহিয়ে।“

-“ম্যায় কেয়া করু!”

-“ইয়ে জেনানাকা মামলা হ্যাঁয়।“

-“তো, ম্যায়নে কেয়া করু?”

-“জেনানাকা ইজ্জৎকা সওয়াল হ্যাঁয়। অব সমঝে কেয়া?”

-“আরে বহেনজি, ইজ্জৎ তো মরদকা ভি হ্যাঁয়। আরে হ্যাঁয় কি নহি সবনে বাতাও।”

সৌরভ রায়চৌধুরীর ছবিএমন কথায় যারা সম্মতিসূচক ভাবে মাথা নাড়ল তারা সংখ্যায় বেশি। এই ভিড়ে সত্যিই পুরুষদের থেকে মেয়েরা সংখ্যায় কম। এমন নিরুদ্ধেশ যাত্রায় সাধারণত তাদের খুব একটা নেওয়া হয় না। কিছুটা হেয় চোখেই মেয়েদের দেখা হয়ে থাকে! তাদের জায়গা বাড়িতে। সন্তানের জন্ম দেও আর বিগলিত করুণায় শুভ্র ফেননিভ জলরাশির মতো দুগদ্ধ দিয়ে যাও। বৈ্দিক যুগ থেকে বা তারো আগে সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে অথবা বিরাট রাজার বিশাল গোশালার সময় থেকেই তাদের কাজটা একেবারে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আজো তাই রয়ে গেছে। ন যযৌ ন তস্থৌ!

গাড়িটা যত জোরে ছুটছে ততই গাড়ির ভিতরে একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকিটা বেশি হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে না এই অজুহাতে পুরুষেরা ইচ্ছে করে মেয়েদের শরীরে ঢোলে পড়ছে কিনা! আসলে রাস্তাটা এতই খারাপ যে ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকে কার সাধ্য।

সংখ্য্যায় মাত্র তিনটি মেয়ে। মেয়ে না বলে মহিলা বলাই ভাল। বয়সও একেবারে কম নয়! কর্মক্ষমতা যে একেবারে শেষ সীমায় এসে ঠেকেছে তা বলাই বাহুল্য। তবু মেয়ে তো! বয়স যতই হোক সম্ভ্রমটা তো খোয়া যায়নি! কাজেই আজো তারা যতটা পারে পুরুষের ছোঁয়া বাঁচিয়েই চলে। অন্তত যুবতীদের মতো অমন ঢলাঢলি পছন্দ করে না।

গাড়ির চাকাটা হঠাৎ একটা গাড্ডার মধ্যে পড়ায় গাড়ির মধ্যে নারী-পুরুষের ভেদাভেদটা একেবারে তালগোল পাকিয়ে গেল। ঘাড়টায় বেশ লেগেছে। পাশের হুমদো পুরুষটা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গায়ের উপর। যেন জীবনে কোনদিন মেয়ে দেখেনি! ঘাড়টাকে একবার দুদিকে ঘুড়িয়ে ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করে। পাশে দাঁড়ান একজন মহিলা বলে,”বহত ঝটকা লাগা?”

যার লেগেছে তার নাম সুনয়নী। একেবারে পটলচেরা চোখ। আজো তেমনটাই আছে, তবে মুখমন্ডলের চামড়া একেবারেই কুঁচকে গেছে। ঐযে বয়সকালে যা হয় আরকি! তবু আজো পুরুষেরা আড় চোখে মাঝে মাঝেই তাকাতে ভুল করে না। কিন্তু ওদের অমন হ্যাংলাপনা সুনয়নীর একেবারেই পছন্দ নয়। গাড়ির মধ্যে এমন ঝাঁকুনিতে পেছন থেকে কোন এক অচেনা গলা ড্রাইভারের উদ্দেশে একটা চার অক্ষরের খিস্তি ছুঁড়ে দেয়। খিস্তিটা এতটাই কাঁচা ছিল যে ড্রাইভার আর তার রাগ সামলাতে না পেরে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক চেপে ধরে এবং গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। সে রাগে চোখ লাল করে বলে,”কৌন খিস্তি মারা? ঘরমে তেরা মা-বহিন হ্যাঁয় কি নহি? আবে নিকম্মা বয়েল, ইয়ে সড়ক তেরা বাপনে বানায়া হোতা তো আচ্ছা হোতা। লেকিন ইয়ে তো নহি হুয়ি। উসি লিয়ে ইতনে দিক্কত সহন পড়তা।“ ড্রাইভার আরো কিছু মোক্ষম গালাগাল দেবে ভেবেছিল কিন্তু এইসব মাথা মোটাদের সাথে কথা বললে এরা কিছুই বুঝতে পারবে না। আর এটাই হচ্ছে মুশকিল!

।।দুই।।

গাড়ির মধ্যে যারা আছে তারা যে সবাই একে অপরের কথা বুঝতে পারছে, তা নয়! কারণ কেউ এসেছে হরিয়ানা থেকে,আবার কেউ এসেছে রাজস্থানের কোন এক অজ গাঁও থেকে। কেউ আবার পাঞ্জাব বা বিহারের কোন মহাজনের ঘর থেকে। কাজেই ভাষার ইতরবিশেষ তো হবেই। হঠাৎ ভিড়ের মধ্য থেকেই কে যেন বলে ওঠে,”মা,আমরা কবে থেকি যেন চলতেছি?”

মেয়ের কথায় মায়ের হুস ফেরে। সে ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে যাত্রার তারিখটা মনে করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কিছুই মনে পড়ে না। বরং সবটাই তালগোল পাকিয়ে যায়। কবে যে ঘর ছেড়ে পথে বেরিয়েছিল,কোথায় চলেছে, আর কবেই বা পৌছাবে তা সে কিছুই জানে না। এমন নিরুদ্দেশে যাত্রার খবর আগে কেউ তাকে দেয়নি। তবে আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠে ঘুরে বেড়ানোর সময় কানাঘুসায় শুনেছিল দলের অনেকেই নাকি মাঝে মাঝে এভাবেই হারিয়ে যায়! যেহেতু যে যায় সেতো আর ফিরে আসে না! কাজেই বাকিদের এসব ঘটনার পরম্পরার গল্প আর শোনাও হয় না। তাহলে তারাও কি আজ অনেকের মতোই হরিয়ে যাচ্ছে! তারা কি দিকশূন্যপুরের উদ্দেশে চলেছে! মাকে এভাবে অনেক্ষণ ধরে নিরুত্তর থাকতে দেখে মেয়ে আবার বলে,”ও মা,তুমি কইলা নাতো আমরা কনে চলতেছি।“

অনেকেই মেয়েটির মুখের ভাষা শুনে অবাক বিস্ময়ে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে। মা যে ব্যাপারটা বোঝেনি তা নয়! ওরা যে গ্রাম থেকে এসেছে সেখানে প্রায় সবাই হিন্দি বা ভোজপুরি ভাষায় কথা বলে। ঐ ভাষা মা যতটুকু বোঝে মেয়ে তাও বোঝে না। আসলে মালিকেরা সবাই বাড়িতে একেবারে বাঙাল ভাষায় কথা বলে। কারণ তারা এই বাড়িটিকে বাংলা দেশের এক বাঙালের সাথে পাল্টাপাল্টি করে নিয়েছে। আর তাই আজো তারা দেশের ভাষা ছাড়তে পারেনি। মেয়েটাও সব সময় মালিকের ছোট ছেলের সাথে থাকার জন্য ওদের মুখের ভাষাটাই রপ্ত করে নিয়েছে।

-“কইতে পারুম না কনে চলতেছি! এ চলার তো দ্যাখতেছি কোন বিরাম নাই! আমরা যে সেই কবে চাট্টা খাইছিলাম, তাকি কাউর খেয়াল আছে? লিশ্চয়ই নাই।“ মা তার মাথা নাড়তে থাকে। একটা শব্দ হয়। ওকে ওভাবে মাথা নাড়তে দেখে বাকিরাও একসাথে জোরে জোরে তাদের মাথা নাড়তে থাকে। আর চারদিকে তার বড় কানের ফটফট শব্দটা নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। গাড়ি তার আপন মনেই চলতে থাকে। শুধু একবার ব্যাপারটা দেখার জন্য ড্রাইভার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।

গাড়ির মধ্যে যারা আছে তারা একে অপরের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সকলের মুখই রয়েছে রাস্তার দিকে। গাড়ির গতির সাথে আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তরগুলো দ্রূত ছুটে চলেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এদিকে বেশ বর্ষা হয়েছে। চারদিকে হরিতের সমারোহ। এমন দৃশ্য দেখে সকলের মুখের মধ্যেই বর্ষার জলের মতো লালা টলটল করে ওঠে! গলাটাকে একটু উঁচু করে সকলেই একবার করে ঢোক গিলে নেয়। ধীরে ধীরে সন্ধার আস্তরণ গাঢ় হতে থাকলে হরিত ক্ষেতগুলোও ক্রমশই দূরে সরে যেতে যেতে একসময় সবটাই অন্ধকারে ডুবে যায়! অথচ সবার চোখে লেগে থাকে সুস্বাদু খাবারের দৃশ্যপট!

।।তিন।।

সন্ধার পর থেকেই আকাশে হিম জমে। এক সময় ওরা নিজেদের ভার ধরে রাখতে না পেরে টুপ টাপ নিচে খসে পড়ে। আর তাই ভোরের হাল্কা আস্তরণের মধ্যে গাড়িটা যখন একটা বিশাল প্রান্তরে এসে দাঁড়িয়ে যায় তখনও গাড়ির মধ্যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা সবার চোখেই ঘুম জড়িয়ে রয়েছে। চোখ খুলতেই বাইরের সতেজ হিমেল হাওয়াটা সবার চোখেই মৃদু ঝাপটা মারে। একে একে গাড়ির পেছনে লাগিয়ে দেওয়া একটা পাটাতনের উপরে খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে সবাই নিচে নেমে শরীরের আড়মোড়া ভাঙে। পাগুলোকে ঝেরে নেয়। চারদিকে তাকিয়ে দেখে বিচ্ছিন্নভাবে আরো অনেকেগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে ওদের মতো অনেকেই জটলা করছে। এই বিস্তৃর্ণ প্রান্তরের পরেই রয়েছে ঘন সবুজ লকলকে সব সুখাদ্যের ক্ষেত। দেখলেই জিভে জল আসে! মেয়ে ভাবে সে একবার মাকে জিজ্ঞাসা করে এক ছুটে যাবে নাকি ঐ পানে। চারদিকে সৌরভ রায়চৌধুরীর ছবিতেমন কোন লোকজন নেই। কাজেই কেই বা তাদের খেয়াল করবে। মায়ের দিকে এক ঝলক তাকাতেই দেখে মাও তাঁর ডাগর চোখ দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে ওদিকেই তাকিয়ে আছে। এবং অদ্ভুত ভাবে মায়ের মুখের দুই প্রান্ত থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটি তার মায়ের মনের কথা টের পেয়ে নিজের মনের ইচ্ছেটা বলে ফেলে। মাও এক কথাতেই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু যাবে কীভাবে! মায়ের সাথে তো আর এক আন্টি দিব্বি কন্ঠলগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গেলে দু’জনকেই যেতে হবে। তাই মায়ের আর যাওয়া হল না। মা পা ভেঙে বসতে চাইলে আন্টিকেও সাথে সাথে বসতে হল। মেয়েটি চারদিকে তাকিয়ে দেখল শুধু সেই একমাত্র মুক্ত! বাকিরা একে অপরের সাথে বাঁধা। মেয়েটি তার জুলজুল চোখে চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে শরীরে যত শক্তি রয়েছে তা দিয়ে ভীষণ জোরে ছুটতে ছুটতে ঐ হরিত শস্য ক্ষেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সামনে যা পায় তাই গোগ্রাসে গিলতে থাকে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই অনেকে রে-রে করে ছুটে এসে ওকে জাপটে ধরে নিজেদের কোলে তুলে নিয়ে একেবারে মায়ের কন্ঠলগ্ন করে মাটিতে শুইয়ে দেয়। মেয়েটি মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,” মা,কিছুটা খাইতে পারছি। আঃ!কী যে মিঠা সোয়াদ।“

-“বেশি কইরা খাইতে পারলি না?” মা জানতে চাইল।

-“অরা পিছে পিছেই আইতেছিল। তাই কিছুটা খাইতেই আমারে জাপটাইয়া কোলে তুইলা নিছে। অগো সাথে কি আমি পারি! আর কিছুটা সময় পাইলেই আমার পেট ভইরা যাইত। আচ্ছা মা, যারা আমাগো আইনলো তারা খাতি দিবেনা?

-“আরে বাবা যা শুইনলাম তাতে খাতি দেওয়া তো দূরের কথা আমাগো নাকি পগার পার কইরবে। কে যে কুথায় যাবে তার ঠিক নাই! কিন্তু আমার চিন্তা তোরে নিয়া। তুই হলি আমার শেষ নাড়ি ছেঁড়া মাইয়া। তোরে ছাড়া বাঁচি ক্যামনে বল!” চোখের কোণা দিয়ে জল পড়ার মতো জলও আজ মায়ের চোখে অবশিষ্ট নেই!

।।চার।।

দু’দিন পরে এই প্রথম পেটে কিছু খাবার পড়ল। তাও ভাল কিছু নয়। সামান্য কিছু কলা পাতা মাত্র। এখানে তো আর নেই এক বালতি ভাতের ফ্যান,গুড় মাখানো তুষ,বড় বড় লাউয়ের টুকরো,বাহারি সবজির চোকলা বা নিদেনপক্ষে এক জাবনা খড়। তবে যে মালিকই যত খাবারই দিক না কেন লকলকে ঘাসের কাছে সবই তুচ্ছ। হয়তো এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সব্বাই কলা গাছের মাথায় ঝুলে থাকা পাতাগুলো গোগ্রাসে গিলে নিচ্ছে। সবার পেটেই এখন আগুনের মতো খিদা। তাই বাদ বিচারের কোন প্রশ্নই নেই।

পাট গাছের বিশাল পাথার। তার মধ্যেই এতক্ষণ যারা কলাপাতা খাচ্ছিল এবার তাদের এক এক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মা-মেয়ে দু’জনের চোখেই অপার বিস্ময়! শেষে আর নিজেকে চেপে রাখতে না পেরে ছোট মেয়েটি বলেই ফেলে,”ও মা,এরা যায় কনে? ওদিক পানে কি ভালো খাবার আছে?”

-“জানি নারে মা। আমিও তো এই পত্থম দেখতেছি!”

-“অরা কি আমাগোও নিয়া যাবে মা? নাকি আমরা থাকুম। আন্টিকো তো নিয়া গেল!”

এমন প্রশ্নের কোন উওর নেই মায়ের কাছে। সেও একটু অবাক হয়েই এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। কিন্তু সবাইকে চিনতে পারল না। ওরা সবাই মাথা নিচু করে এখনও পাতা খেতেই ব্যস্ত। মা ভাবল তার গলার সাথে আর একজন যে বাঁধা ছিল তাকে নিয়ে যাওয়ায় সেও এখন একেবারে মুক্ত। তাহলে সেকি তার মেয়েকে নিয়ে উর্ধশ্বাসে যে কোন দিকে ছুটতে শুরু করবে! ছুটতে ছুটতে সামনে যে গ্রাম পাবে সেখানে না হয় কারোর গোয়ালে দিব্বি সিঁধিয়ে যাবে। এতে অবশ্য গোয়ালের মালিকেরই লাভ হবে। সাথে একটা বকনা বাছুর মাগনা পেয়ে যাবে। হঠাৎ দেখে পাশে তার মেয়েটা নেই। আর সাথে সাথে সেই লোকগুলো তার মেয়ে আর তাকে ধরে নিয়ে গেল একেবারে নদীর পাড়ে। এত বড় যে দরিয়া হতে পারে তা এর আগে সে কোনদিন দেখেনি! সাথে সাথে মেয়ে চিৎকার করে বলে,”মা ওই দেখতেছ আন্টি কেমন হেলতেছে। আমারাও কি জলে হেলব মা?”

-“হ। তাইতো দেখতেছি!”

সবার শরীরেই তিন টুকরো কলা গাছ বাঁধা। সামনেরটায় যূপ কাষ্ঠের মতো গলার নিচে দিয়ে রাখতে হয়। আর বাকি টুকরোদুটো শরীরের দু’প্রান্তে বাঁধা। এতে কেউই ডুবে যাবেনা। সাথে নৌকা করে দুটো লোক সবাইকে খেদিয়ে নিয়ে চলেছে ওপারের উদ্দেশে। মা একবার তারস্বরে মেয়েকে ডাকল। একটু দূর থেকে মেয়ে সামান্য সারা দিল। অথচ মা তাকে দেখতে পেলনা!

সৌরভ রায়চৌধুরীর ছবি এমন বিশাল দরিয়ার বড় বড় ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে সবার মাথায়। প্রয়োজনের থেকেও অধিক জল বাধ্য হয়েই সকলে গিলে নিচ্ছে। ধীরে ধীরে ওপারটা ক্রমশই এগিয়ে আসছে। একসময় মাও পৌছে গেল ওপারে। কিন্তু নাড়ি ছেঁড়া মেয়েটা কৈ! মা যতই তার মেয়েকে খোঁজে ততই লোকে তাকে টানতে থাকে। একে একে সবাই ডাঙায় উঠে দাঁড়ায়। মা তারস্বরে মেয়েকে ডাকে। দূরে দেখে শুধু একটাই ভেলা জলের উপর দোল খাচ্ছে। পাশ থেকে একজন বলে ওঠে,”আহারে! অতটুকু বকনা কি আর পদ্মা হেলতে পারে! তাই তো সে আর–। জিন্দা থাইকলে হামিই অরে পাইলতাম। বড় কইরতাম । মাইয়াটা কবে থেকি একটা বকনা পাইলতে চাইছিল !”

মা বুঝতে পারেনা এই মুহূর্তে তার চোখে পদ্মার জল,নাকি নিজের চোখের জল একাকার হয়ে গিয়েছে!

ছবির সংরচনা ড্যাল-ই-এর মাধ্যমে এবং প্রোক্রিয়েট দিয়ে স্কেচ করেছেন সৌরভ রায়চৌধুরী