গ্লাভস
4/5 - (1 vote)

শহরের ব্যস্ততম ঘুপচি পাইল ব্রিজে ওঠার মুখেই একটা সাদা রঙের গ্লাভস পড়েছিল। সমস্ত যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হতে হতে সেটার ঘিয়া রঙের উপর ধুলোর পরত জমে কালচে হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এইরকম রাস্তায় গ্লাভসটার পড়ে থাকা অনেকের চোখ এড়ালেও গণেশের এড়ায়নি। গণেশের মনে হয় কি যেন বলতে চায় গ্লাভসটা! তাই বোধহয় বহু মানুষের অবহেলা উপেক্ষা করে গণেশের জন্য পড়েছিল রাস্তায়।

গণেশ রোজ পাইল ব্রিজ টপকে ব্রয়লার মুরগি সমেত ভ্যানটা চালিয়ে বড় রাস্তার ধারে ফুটপাতে দোকান সাজাতে যায়। দোকান বলতে আর কি! কালো ত্রিপল বিছিয়ে নিয়ে একটা কাঠের গুড়ি, কয়েকরকম কাটার, জলের বালতি। ক্যাশ বাক্স বলতে পলিথিনে মোড়া থোক টাকা। প্যান্টের পকেটেই থাকে। দিন দুয়েক ধরে চোখে পড়ছিল গ্লাভসটা। যত দেখছিল তত একটা নিষিদ্ধ ইচ্ছে পেয়ে বসছিল। একটা গ্লাভস সে কিনতেই পারে। ক টাকাই আর দাম হবে! কেনেনি, কেননা কেনার কথা মনেই আসেনি। পড়ে থাকা গ্লাভস দেখে শিশুর মতো রোখ চেপে বসে সেটাকে পেতে।

চিত্রদীপ দাশের ছবিতাদের কলোনিতে এই জিনিস কেমন যেন বেমানান। বেশির ভাগ লোকই তো ডালপুরি–চপ বিক্রি করে, নয়তো সাইকেল সারাইয়ের দোকান, চায়ের দোকান, ডিয়ার লটারি বিক্রেতা। এ গ্লাভস কার কোন কাজে লাগে! সেটাকে দেখলেই মনে হয় কে যেন মার্ডার করে ফেলে রেখে গেছে। তবুও দেখলে নেশা লাগে। এরকম বহু জিনিসের শখ ছেলেবেলায় মেটেনি। আজও মেটেনি। কি সুন্দর জিনিস! হাতে পড়ে নিয়ে যা খুশি করো। ময়লা ঘাঁটো, খুলে ফেললেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে পরিষ্কার হাত।

পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে খুব ইচ্ছে হয় গ্লাভসটা তুলে নেয়। সেটা যে কোনও তুচ্ছ জিনিস নয়, যত দেখে গনেশের তত মনে হয়। নিজের বুকের ধুকপুক শুনতে শুনতে এদিক ওদিক চেয়ে দেখেছে, কেউ না কেউ থাকেই। কেউ না কেউ গণেশকে দেখছেই। তুলতে সংকোচ বোধ করে।

বাচ্চা বয়সে মাঠেঘাটে কন্ডোম পড়ে থাকতে দেখে একবার তুলে নিয়ে ফুলিয়ে কলোনির রাস্তায় রাজুর সাইকেলের হ্যান্ডেলে বেঁধে ঘুরে বেড়িয়েছিল। কেউ হয়ত কান ভাঙিয়েছিল। সন্ধ্যায় কাকা চোয়ানি গিলে এসে জুতো দিয়ে খুব পিটিয়েছিল। তার পর থেকে পড়ে থাকা যে কোনও জিনিস তুলে নিতে ভয় পায়।

রবিবারে দোকান গুটিয়ে ফিরতে দেরি হয়। ভ্যান নিয়ে ফিরতি পথে গ্লাভসটা দেখে ব্রিজের শেষে নোনাফল গাছের ছায়ায় দাঁড়ায়। একটা বিড়ি ধরায় গণেশ। এক–দুই টান দিতে দিতে এদিক ওদিক তাকায়। গোটা বগুড়া কলোনি নিঃসঙ্গ পায়রার মতো ঝিমোচ্ছে রবিবারের দুপুরে। কেউ নেই কোথাও। রবিবারের দুপুরে রাস্তাঘাটে মানুষ কমে যায়। যে মেয়েটা অনলাইন ফর্ম ফিলাপের দোকান খুলে সবসময় কম্পিউটারে চোখ লাগিয়ে বসে থাকে, সেও নেই। গজেন বর্মন আগে মাটির প্রতিমা বানাতো ত্রিপল টাঙানো জায়গাটায়, এবছর লক্ষ্মীপুজোর আগেই মারা যাওয়ায় তার অসমাপ্ত প্রতিমা গুলোই কেবল তার দিকে চেয়ে আছে। গ্লাভসটা টুক করে তুলে মুরগির রক্তের ছিট লাগা বিবর্ণ জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।

আগে গণেশের বেড়াখোড়া দিয়ে তৈরি একটা ভাঙা চোরা ঘরের মতো কিছু ছিল। জন্মের পর থেকেই ওভাবেই কেটে গেছে কতকাল! তাপ্পি মারা বেড়ার ফুটো দিয়ে আলোর বর্শা ঢুকে না বিদ্ধ করলে দিনই হতো না তাদের। শীতের রাতও রাত মনে হতনা ঠান্ডা হাওয়ার তীক্ষ্ণ খোঁচা না খেলে। এখন সরকারি আবাস যোজনার ঘরের টাকা পেয়ে বস্তির অনেকের মতো নীল–সাদা বাড়ি হয়েছে তার। এখন কেন যেন কথায় কথায় বাড়ি ফিরে আসতে ইচ্ছে করে গণেশের। দূর থেকে বাড়িটাকে দেখতে ইচ্ছে করে। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে কি শান্তি! কি শান্তি! ছাদে মালার নেড়ে দেওয়া ভেজা কাপড়চোপড় বাতাসে ওড়ে। বাঁশের কঞ্চির গেটটার পাশে নয়নতারার জঙ্গলে মালার গোবরছড়ার অবশিষ্ট অংশ জমে উঠে কেমন সুখের গৃহস্থালি গড়ে তুলেছে।

গ্লাভসটি কলতলায় সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে দেখে মালা বলে, এটা আবার কি এনেছো?

গণেশ মালাকে দেখাতেই তাচ্ছিল্য ভরে টিভির পাশে রাখতে রাখতে বলেছিল, একজনের কাছ থেকে চেয়ে আনলাম। মুরগি কাটার সময় এটা পরে নিলে হাতটা নোংরা হবে না।

একটায় কি হবে?

গণেশ নিরুত্তর থাকে। সত্যিই তো, একটায় কি হবে!

সারাদিনের খাটুনির পর স্নান খাওয়া সেরে গড়িয়ে নেওয়ার জন্য শুতেই টাইট হয়ে চোখ লেগে এসেছিল গণেশের। মালার ধাক্কাধাক্কিতে ধড়মড় করে উঠে বসে। বগুড়া কলোনির যে বাচ্চাটাকে পাওয়া যাচ্ছিল না দিন দুয়েক ধরে, তাকে পাওয়া গেছে। মৃত। পাইল ব্রিজের তলা দিয়ে বয়ে যাওয়া রুগণ খাঁড়িতে।

গণেশ ছেলেবেলায় দেখেছে আত্রেয়ী নদীর ওই খাঁড়ির ধার একসময় মৃত পশুর ভাগাড় ছিল। শকুনের দল নেমে আসতো। পচা পশুর গন্ধ স্থায়ী দুর্ভাগ্যের মত লেগে থাকতো খাঁড়ির পাশে কলোনির নির্জন দিকটায়। সেখানেই কচুরিপানা ঢাকা অল্প জলে মুখ বাঁধা বস্তায় পাওয়া গেছে বাচ্চা ছেলেটার লাশটা। জল কম থাকায় বস্তাটা ভেসে যেতে পারেনি। পচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল।

গণেশ চকিতে উঠে বসে কিছুক্ষণ ভোম মেরে থাকে। মুরগি কাটার মতো একটা রক্তারক্তির পেশায় থাকলেও এধরনের খুনখারাপি দেখতে তার হাত-পা কাঁপে। বিশেষ করে নোটন বলে যে বাচ্চাটার লাশ পাওয়া গেছে, তাকে ভালো মতোই চিনতো। তাদের এই বস্তির ঘরে ঘরে তার যাতায়াত ছিল।

চিত্রদীপ দাশের ছবিনোটনের বয়স কত হবে! বড়জোর সাত-আট। ছেলেটা জন্মেছিল গুরুগাঁওয়ে। গণেশ তার বাবা–মাকে বিয়ের পরপরই দিল্লি চলে যেতে দেখেছিল। তখন বস্তির অনেকেই যাচ্ছিল বাইরে কাজ করতে। একজনের যা করে, সেটাই সবার মধ্যে হিড়িক পড়ে যায়। পাইল ব্রিজ হওয়ার আগে বস্তির বেশিরভাগ পুরুষ রিক্সা চালাত। বউ–মেয়েরা লোকের বাড়ি কাজ করতো। রাস্তা হয়ে শহরের বেশিরভাগ মানুষের এ রাস্তায় যাতায়াত শুরু হলে বস্তির ঘরগুলো দোকান হয়ে উঠল। বিড়ি সিগারেট পান দোক্তার দোকান একটা গজাতেই, পাশে পাশে বিড়ি সিগারেটের দোকান গজালো। তারপর পানের দোকান, সেলুন, দরজির দোকান। যে যা পেরেছে করেছে।

আগের মতো আত্মীয়তা থাকলো না বস্তির মানুষের মধ্যে। একটা ‘ছোটলোকের’ পাড়া আস্তে আস্তে বদলে গেল গণেশের চোখের সামনে। নতুন রাস্তার ধার ঘেঁষা বাড়িগুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে নতুন বড় বড় দোকান হচ্ছে। ভাবা যায় এই বগুড়া কলোনির মধ্যে বাইকের শোরুম! মল! জন্ম থেকে গণেশ দেখেছে ষাট পাওয়ারের বাল্ব জ্বলা বস্তি। আর এখন কি না হচ্ছে!

মালা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ঘরে ঢোকে – ঘরেই থাকবে নাকি! কলোনির লোকেরা জগদীশের ঘরে তো আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দাউদাউ করে জ্বলছে। দমকলের ঘন্টির আওয়াজ পাচ্ছ না!

গণেশ থতমত খেয়ে বলে – কেন? কেন?

জগদীশ মেয়ের কারবার করতো বলে! একটা মেয়েকে মুখ বেঁধে ঘরে রেখেছিল। নোটন নাকি ওর ঘরে ঢুকে দেখে ফেলেছিল।

হু। তোমাকে তো আগেই বলেছি, জগদীশের বাড়ির সামনে অনেক রাতে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। অচেনা লোকজন আসে।

নোটনদের ঘরটায় তালা ঝুলতো। দেখে রাখতো পাশের বাড়ির যমুনা। সে নোটনের ঠাকুমার আপন বোন। অন্য অনেক বাড়ির মতো তাদের বাড়িতে আলো জ্বলতো না। কিন্তু গণেশ জানতো যে সব বাড়িতে আলো জ্বলে না সেগুলোই ‘কাজের কাজ করছে’। ফিরে আসবে যখন দুই হাতে পয়সা ওড়াবে। বাড়িতে ছাদ দেবে, টিভি ফ্রিজ কিনবে, ছেলেমেয়েকে সস্তার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবে।

নোটনদের হঠাৎ ফিরে আসতে হয়েছিল গুরুগাঁও থেকে। খুব একটা পয়সা করতে পারেনি পাপ্পু কাহার। করোনার সময় কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কাজকর্ম ছিল না। বসে বসে জমানো টাকা ধ্বংস করতে চায়নি পাপ্পু। বউ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সবার সাথে বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি ফিরবে বলে। গণেশ কিছু শুনেছে যমুনার মুখে। কিছু কানাঘুষো। রোদে তেতে, বৃষ্টিতে ভিজে তারা হেঁটেছিল মাইলের পর মাইল। নোটন কখনো পাপ্পুর পিঠে, কখনো পায়েলের কোলে চেপে এসেছিল। কেননা হাঁটতে হাঁটতে তার ছোট পায়েও ফোস্কা পড়েছিল। জামা চিপলে জল বেরোতো।

নোটন সবাইকে সে সব গল্প শোনাত। সে সব গল্প শুনতে বস্তি থেকে যারা কখনো বাইরে যায়নি তারা নোটনকে লজেন্স কি চিপসের প্যাকেট কিনে দিয়ে কথা শুনতো। গণেশ শুনেছে, মালা শুনেছে ঘরে বসিয়ে নিয়ে। মালা নোটনের বিদেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে হা হয়ে যেত। গণেশই বলেছে, এই মালা ছেলেটার হাতে কিছু দাও। মালা শশব্যস্ত হয়ে কৌটো খুলে মুড়ির মোয়া হাতে দিত।

হাঁটতে হাঁটতেই নোটনের জীবন কিভাবে বদলে গিয়েছিল তা নোটন টেরও পায়নি। গণেশ সে কাহিনি শুনেছিল যমুনার মুখে। পাপ্পু যখন নোটনকে পিঠে নিয়ে হনহন করে হাঁটতো, অনেকটা পিছনে পড়ে যেত পায়েল। তার জিনিসপত্র লটবহর নিতে সাহায্য করতো তাদের কারখানার লেবারার ম্যানেজার দেওরাজ নামে পুর্ণিয়ার এক যুবক। পায়েল ভাই পাতিয়েছিল বহু দিন থেকে। একদিন পিছন ফিরে পাপ্পু পায়েলকে আর দেখতে পেল না। দলের আর সবাই আগে পিছে হাঁটছে। কিন্তু পায়েল আর দেওরাজের দেখা মিললো না। অনেক অপেক্ষা করেও তাদের না পেয়ে পাপ্পু নোটনকে সাথে নিয়ে কিভাবে যেন ফিরে এসেছিল বগুড়া কলোনির ভাঙা ঘরে।

লকডাউনের দিনগুলোতে গণেশ তাসটাস খেলে সময় কাটাত পাপ্পুর সাথে। মনমরা হয়ে গিয়েছিল। বস্তির মানুষেরা সামনে সামনে কিছু বলেনি কিন্তু কানাঘুষো করতো। মরমে মরে যেত পাপ্পু। সন্ধ্যা হলে পুলিশের গাড়ির আনাগোনা কমে গেলে করোনার দিনগুলোতে পাপ্পু বটগাছের তলার শিবমন্দিরে গাঁজা খেত। কখনো সখনো কোথা থেকে শেখা ভোজপুরি গান গাইতো গলায় খোল ঝুলিয়ে।

নোটনের প্রতি তার আর কোনও খেয়াল ছিল না। বস্তির এর তার বাড়ি বাড়ি ঘুরে খেতে পেত। যমুনা কাজের বাড়ি থেকে ফিরে রাঁধা গরম ভাত খাওয়াতো। অল্পস্বল্প সেলাই জানা মালাকেও দেখেছে নোটনের জামার বোতাম সেলাই করে দিতে। ছেঁড়া প্যান্টে রিফু করে দিতে।

একদিন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পাপ্পু নোটনের কপালে চুমু দিয়ে বলল, বাপ! যমুনা ঠাকমার সাথে সাথে থাকিস। কথা শুনে চলিস। মাসে মাসে টাকা পাঠাবো।

পাপ্পু পিঠে নেওয়ার ব্যাগটা নিয়ে চলে গেল। নোটনের ঠোঁট বেকিয়ে কি কান্না! যমুনা গণেশের কোলে দিয়ে বলল – চুপ কর। গণেশ কাকার সাথে যা। মিঠাই কিনে দিবে।

বহুদূর গণেশের হাত ধরে হেঁটেছিল। সেই রাতে নোটন গণেশকে ছাড়েনি। মালা তাকে রান্না করা ভাত খাইয়ে কোলের কাছে নিয়ে শুয়েছিল। মাঝরাতে নোটন ঘুমের ঘোরে বলছিল, অ্যাত মানুষ টেনে! মাথা আর মাথা। হাঁটা যাচ্ছে না। পেচ্ছাপ করতে যাব, কোথা দিয়ে বাবা? মালা তাকে নিয়ে বাইরে থেকে পেচ্ছাপ করিয়ে আনে।

ভোরের দিকে নোটন বিড়বিড় করে, গ্লাবসটা ! আমার সাদা গ্লাবসটা! কারখানায় গ্লাবস পরে বাবার সাথে কাজ করবো।

গণেশ ঘুম থেকে জেগে গিয়ে বলেছিল, আচ্ছা তোকে বাবার মতো গ্লাভস কিনে দিব। এখন আরেকটু ঘুমিয়ে নে। সকালে ঠাকমার কাছে যাস।

কলোনিতে একটা কান্ড ঘটে গেলে দফায় দফায় যত আলোচনা সমালোচনা করতে হয় যে সেই দিনগুলোতে রাত নামে কিছু আগেই। ঝড়ঝঞ্ঝার পর শান্ত পরিবেশের মতো নিঝুম বগুড়া কলোনিতে গণেশের ঘুম আসে না। বস্তির রাস্তায় চার-পাঁচজন সিভিক ভলেন্টিয়ার কয়েকজন পুলিশের সাথে বসে আছে। বিশাল মাঠটায় রাস্তার আলো নেমে এসেছে। শহর চষে বেড়ানো ক্লান্ত ষাঁড়গুলো পিঠের কুঁজ নিয়ে ঝিমোচ্ছে। গণেশের জানালার পর্দাটা উড়ে গেলে দেখা যাচ্ছে। দূরের কুকুরের ডাকের উত্তেজনা মানুষের মধ্যে আলস্য নিয়ে এসেছে। মালা শুয়ে আছে পাশে। ঘুমিয়ে গেছে। গণেশের চোখে কেবল নাইট ল্যাম্পের আলোয় ভাস্বর গ্লাভসটা চোখে পড়ছে। জোর করে চোখ বুজে থাকলেও নোটনের মুখটা ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে ঘরের পাশ দিয়ে সেই রঙ ক্ষয়ে যাওয়া লাল গেঞ্জিটা পরে হেঁটে চলে যাচ্ছে কোথাও।

চিত্রদীপ দাশের ছবিমালা বলছিল, নোটনকে গলাটিপে মারা হয়েছিল। বস্তায় একটা গ্লাভস পাওয়া গেছে। নোটনের হাতে ধরা ছিল। গণেশ মশারির মধ্যেই উঠে বসে। জগদীশ কি গ্লাভস পরে নোটনকে মেরেছিল! নাকি বাবার পুরনো গ্লাভস পরে নোটন ঘুরে বেড়াচ্ছিল?

গণেশের মনে পড়ছে – নোটনের হাতে গ্লাভস দেখেছে আগে। পাপ্পুর রেখে যাওয়া কয়েকটা গ্লাভস ওর প্রয়োজনের খেলার সামগ্রী হয়ে উঠেছিল। বিনা কারনে গ্লাভস পরে বস্তিতে ঘুরে বেড়াতো।

গণেশ কলতলায় গিয়ে চোখেমুখে জল দেয়। ওদিকের রাস্তায় পুলিশ পিকেটিং। কিন্তু গ্লাভসটা আর ঘরে রাখতে চাইছে না সে। ভোর ভোর হলে বেরোতে গেলে মালা জেগে যেতে পারে। গণেশ দরজা ভেজিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নোটন হেঁটেছিল একদিন বাড়ি ফিরতে। আর গুরুগাঁওয়ে বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারলো না। খুব শখ ছিল একটা গ্লাভস পরে বাবার সাথে কারখানায় যাবে। গণেশ গ্লাভসটা হাতে গলিয়ে নেয়। মনে হয় – সে নয়, আসলে হাঁটছে নোটন। পায়ে ফোস্কা নিয়েও সে হেঁটেই যাবে। তাদের বগুড়া কলোনির রাস্তা, শহরের রাস্তা, জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে সে এক অনির্দিষ্ট পথে হেঁটে চলে।

ছবি: চিত্রদীপ দাশ